ইরানের হামলা, ইসরায়েলিদের কণ্ঠে আতঙ্ক

এনএস ডেস্ক
ইরানের নিক্ষেপ করা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলে আঘাত হেনেছে। এতে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রাণ হারান তিনজন ইসরায়েলি ও আহত হয়েছে প্রায় কয়েক ডজন মানুষ। 

শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে এ হামলায় ইসরায়েলের বাসিন্দাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, হতবিহ্বলতা ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। তারই বিবরণ দিয়েছেন কয়েকজন ইসরায়েলি।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ইসরায়েলের তেল আবিবের একটি বহুতল ভবনে। ওই ভবনের বাসিন্দা টালি হোরেশ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেটনিউজকে বলেন, ‘আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে কম্পিউটারে খবর দেখছিলাম। হঠাৎ এত বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটল যে পুরো ভবন কেঁপে উঠল।’ 

তিনি বলেন, ‘কয়েক মিনিটের মধ্যে স্মোক ডিটেক্টর বেজে উঠলে আমরা দরজা খুলি। পুরো “লিভিং রুম” ধোঁয়ায় ভরে যায় এবং আমরা আবার নিরাপদ কক্ষে ফিরে যাই।’

উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর আগপর্যন্ত দুই ঘণ্টা হোরেশ ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই কক্ষে ছিলেন বলে ওয়াইনেট জানান। হোরেশ জানান, ভবনের নিচের মেঝেগুলোয় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যায়।

সেনাসদস্য, অগ্নিনির্বাপণকর্মী, পুলিশ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রকৌশলীসহ উদ্ধারকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা সেখানে তৎপরতা চালান। ভবনের মধ্যে আর কেউ আটকা নেই, সেটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন তারা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হোম ফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন কর্নেল (অব.) মাইকেল ডেভিড। তিনি ওয়াইনেটকে বলেন, ‘এত বড় মাত্রার ঘটনা আমরা অতীতে দেখিনি।’

মাইকেল ডেভিড জানান, তারা ভবনের এক বাসিন্দার ছবি পেয়েছেন, তিনি আটকা পড়েছেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই ভবনে কয়েকশ’ ভাড়াটে থাকেন। কোনো বাসিন্দা বিপদে নেই, এমনটা নিশ্চিত না হওয়ার আগপর্যন্ত তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পারেন না।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবের কাছের শহর রামাত গানেও ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ হামলায় ৬৩ জন আহত হন। তাদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন গুরুতর আহত, যিনি পরে মারা গেছেন।

শনিবার ভোররাতের দিকে ইরানের আরেক দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবের কাছের আরেক শহর রিশনের আবাসিক এলাকা আক্রান্ত হয়। এ হামলায় ইসরায়েল আলোনি (৭৩) ও আরেক নারী নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে তিন মাস বয়সী এক শিশুও রয়েছে।

ইদান চেন ওয়ালা বলেন, ‘আমরা যখন এই কাজ করছিলাম, সে সময় ওপরের ঘর ও সামনের ঘরেও লোকজন আটকা পড়েছিল। আর এর উল্টো দিকে আগুন জ্বলছিল। পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে আমি পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করি।’

রাতের পরিস্থিতি নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা অভি গাতেনিও চ্যানেল ১২–কে বলেছেন, ‘‘আমি সন্তানদের নিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। সাইরেন বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে নিরাপদ কক্ষে চলে যাই। এর পাঁচ মিনিট পর আমরা বিরাট বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। 

এরপর বাইরে বেরিয়ে দেখি এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে গেছে। পরে আমি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এক প্রবীণ দম্পতিকে বের হতে সহযোগিতা করি।’

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল