শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
বিশেষ প্রতিবেদন

'দুদকের ভয়ে' এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি প্রত্যাহার!

L.M. ৩০ জুন ২০২৫ ০২:০৫ এ.এম

newssign24 শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের নেতা ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের যৌথ সংবাদ সম্মেলন: ছবি সংগৃহীত

মুনতাহা মায়মুনা
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে রবিবার (২৯ জুন) বিকালে জানানো হয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ৬ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এর ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে চলমান 'কমপ্লিট শাটডাউন' ও 'মার্চ টু এনবিআর' কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

রবিবার (২৯ জুন) রাতে কর্মসূচি প্রত্যাহারের এ খবর দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদার। 

যদিও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নেতারা বলছেন, সরকারের কমিটি গঠন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ মহলের মত, দুদকের ভয়ে নেতারা পিছিয়ে এসেছেন। 

গত কয়েকদিন ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের  পদত্যাগসহ একাধিক দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে রবিবারও (২৯ জুন) 'কমপ্লিট শাটডাউন' ও 'মার্চ টু এনবিআর' কর্মসূচি পালিত হয়েছে ঢাকাসহ এনবিআরের গুরুত্বপূর্ণ সব বিভাগে।

কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপর কর্মসূচি স্থগিত করায় নানা মহলে নানামুখী পর্যালোচনা চলছে। আলোচনা-সমালোচনা এবং বিতর্ক চলছে বিভিন্ন মহলে। 

রবিবার (২৯ জুন) দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে  জানিয়েছেন, এনবিআরের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ওই তালিকায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদারের নামও রয়েছে। 

আকতারুল ইসলামের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআরে কর্মরত অনেকে বিগত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকরি করার সুবাদে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন। এর ফলে তারা নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অনেকে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। 

এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনবিআরের আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম, ঢাকা কর অঞ্চল ৮-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদউদ্দীন খান, ঢাকা করা অঞ্চল ১৬-এর উপ-কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতা, নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং সংযোজন কর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদার এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। 

এদিকে একইদিন অর্থাৎ রবিবার (২৯ জুন) এনবিআরের সংকট নিরসনে সরকার এক বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। নতুবা দেশের  জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। 

এছাড়া রবিবার (২৯ জুন) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট সংকট নিরসনে ৫ উপদেষ্টার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

একই দিন বিকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা থাকলেও দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি বৈঠক করবেন না। 

এ সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা কর্মসূচি পালন করতে চাইলে করুক। এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হচ্ছে না। উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠক না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

একইসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা জানান, আজ (রবিবার) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। 

এই সম্পর্কিত আরও খবর