মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
স্বাস্থ্য

শিশুর এডিনয়েডের সমস্যা কীভাবে বুঝবেন, কখন অপারেশন করবেন?

নিউজ ডেক্স ২৮ মে ২০২৪ ০৭:৪৮ পি.এম

সংগৃহীত

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তার এডিনয়েডের সমস্যা আছে কি না জানা জরুরি।  এডিনয়েড কী এবং কখন অস্ত্রোপচার করবেন?

শিশুর এডিনয়েড কী ও কেন হয়

এডিনয়েড হচ্ছে এক ধরনের লিম্ফয়েড টিস্যু বা লসিকা গ্রন্থি, যেটা সব শিশুরই থাকে। শিশু এডিনয়েড নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ২ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড স্বাভাবিক থাকে। ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড ধীরে ধীরে একটু বড় হয়। আবার ৭ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত এডিনয়েড সর্বোচ্চ আকৃতিতে পৌঁছে। ৯ বছর বয়স থেকে এডিনয়েড ছোট হতে থাকে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে। ১২-১৩ বছরেও এডিনয়েড থাকে, তবে সেটি সংখ্যায় খুব কম।

গঠনগত দিক থেকে এডিনয়েড ও টনসিলের গঠন এবং কার্যকারিতা একই রকম। শ্বাস-প্রশ্বাস অথবা খাবারের সময় বিভিন্ন রোগজীবাণু শরীরে প্রবেশ করে, তা ধ্বংস করে দেয় এডিনয়েড ও টনসিল।

এডিনয়েড থাকে নাকের একদম পেছনের অংশে। নাক ও গলার সংযোগস্থলে যে নরম তালু আছে তার ওপরে এডিনয়েড থাকে। এটি খালি চোখে দেখা যায় না, এক্সরে  বা ন্যাজোঅন্ডোস্কোপের সাহায্যে দেখতে হয়। সব শিশুদের এডিনয়েড থাকে, এটি কোনো সমস্যা না। কিন্তু ঘন ঘন ঠান্ডা-জ্বরের কারণে, সর্দির কারণে, অ্যালার্জিজনিত কারণে শিশুর এডিনয়েডে যখন বার বার ইনফেকশন হয় তখন এডিনয়েড স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে যায়। তখন বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। আর এডিনয়েড বড় হয়ে যখন বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে তখন সেটি শিশুর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শিশুর এডিনয়েড আছে কীভাবে বুঝবেন

শিশুর এডিনয়েড গ্রন্থি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে তাদের চেহারায় এক ধরনের পরিবর্তন আসে বা ছাপ দেখা যায়। যেটাকে এডিনয়েড ফেসিস বলা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন-

শিশু মুখ হাঁ করে শ্বাস নেবে, নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারবে না। দীর্ঘদিন মুখ হাঁ করে শ্বাস নেওয়ার কারণে শিশুর সামনের পাটির দাঁত স্বাভাবিকের চেয়ে উঁচু থাকবে। মাড়ি নরম হয়ে যাবে। মুখ দিয়ে লালা পড়বে। দীর্ঘদিন শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার কারণে নাকের ছিদ্রগুলো ছোট হয়ে আসবে। মুখের ভেতর বিষণ্ণ ভাব চলে আসবে, ভাবলেশহীন দেখাবে। মুখমণ্ডলের এই পরিবর্তনকে এডনিয়েড ফেসিস বলা হয়। এ ছাড়া শিশুর ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণে কানে ব্যথা হয়, কানে কম শোনে, কান পাকে ও কান দিয়ে পানি পড়ে।

এডিনয়েডের সমস্যা

১. চিকিৎসাবিজ্ঞানে এডিনয়েড গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ৪ পর্যন্ত গ্রেডিং করা হয়।

২. গ্রেড ১ হলো অ্যাডিনয়েডস নাকের পেছনে ২৫% ব্লক,

৩. গ্রেড ২ হলো ২৫%-৫০% ব্লক,
৪.গ্রেড ৩ হলো ৫০%- ৭৫% এবং

৫. গ্রেড ৪ হলো ৭৫% থেকে নাকের পেছনে সম্পূর্ণ ব্লক।

শিশুর এডিএইচডি
এডিনয়েড ৫০% এর বেশি হলে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। যেমন-

১. শিশু যখন ঘুমাবে তখন হাঁ করে শ্বাস নেবে, নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারবে না, মুখে গড়গড়, গোঙানির মত শব্দ হবে। অনেকটা নাক ডাকার মতো শব্দ হবে।

২. কিছুক্ষণ পর পর ঘুম থেকে উঠে যাবে। ঠিকমতো ঘুমাতে পারবে না। ঘুমের মধ্যে ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড বা কিছু সময়ের জন্য শ্বাস একদম বন্ধ হয়ে যাবে, এটাকে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়।

৩. এই ধরনের শিশুদের ঘনঘন সর্দি কাশি হবে, একবার সর্দি কাশি শুরু হলে সহজে সুস্থ হয় না।

৪. এডিনয়েড বড় হয়ে যাওয়ার কারণে ঘনঘন কানে ব্যথা হবে, বিভিন্ন ইনফেকশন হবে কানে, কানের পর্দা ফেটে কান দিয়ে পানি পড়বে, অনেক সময় কানের ভেতর পানি জমে গ্লু ইয়ার তৈরি করে। নাকের সঙ্গে কানের সংযোগের জন্য ইউস্টেশিয়ান নামক একটা টিউব আছে। এডিনয়েড স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে গেলে এই টিউবের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং এডিনয়েডে ঘনঘন ইনফেকশনের কারণে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউবে প্রদাহ হয়ে তা বন্ধ হয়ে যায় ফলে এসব সমস্যা হয়।

৫. এডিনয়েডের কারণে শিশু ঘনঘন মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। সেজন্য গলায় ইনফেকশন হতে পারে, গলার স্বর বসে যেতে পারে, খুসখুসে কাশি হতে পারে।

৬. অনেকের আবার এডিনয়েডের ইনফেকশনের সঙ্গে টনসিলেও ইনফেকশন হয়।

৭. এডিনয়েড বড় হলে শিশুর শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে সবসময় ঘুম ঘুম ভাব থাকে, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে, বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

৮. মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়। যে কারণে খাবার খেতে চায় না, খাবার খেতে অসুবিধা হয়। শিশুর ওজন কমতে থাকে ধীরে ধীরে।

৯. অনেক শিশু বড় হয়ে যাওয়ার পরেও রাতে বিছানায় প্রস্রাব করার প্রবণতা থাকে।

এডিনয়েড চিকিৎসা, কখন অস্ত্রোপচার করবেন

শিশুর সমস্যা ও উপসর্গ দেখে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে শিশুর এডিনয়েড আছে কি না। এডিনয়েড কোন গ্রেডে আছে সেটিও দেখতে হবে। বয়সভেদে বিভিন্ন ধরনের নাকের ড্রপ বা স্প্রে এবং অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে।

এরপর নিয়মিত ওষুধ এবং ফলোআপ চিকিৎসার মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হয় এডিনয়েড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে কি না। চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকের এডিনয়েড নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

যদি দেখা যায় ওষুধে কাজ করছে না, এডিনয়েডের সঙ্গে শিশুর কানে সমস্যা আছে তাদের অস্ত্রোপচার করতে হয়। এডিনয়েড সার্জারির সঙ্গে কানে পানি জমা থাকলে সেটিও সার্জারি করে বের করতে হয়। অনেক সময় ওষুধের মাধ্যমে কানের সমস্যা সমাধান করা যায়। ৮০% শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের এডিনয়েড আছে তাদের টনসিলেরও সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় দুটোই সার্জারি করে ফেলে দিতে হয়। তবে অস্ত্রোপচারের জন্য যেসব চিহ্ন থাকা জরুরি শুধু সেসব থাকলেই অস্ত্রোপচারে যেতে হবে।

শিশুর সঠিক যত্নের মাধ্যমে এডিনয়েড ইনফেকশনের হার কমানো সম্ভব। শিশু যাতে ধুলোবালি, স্যাঁতস্যাঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুকে আইসক্রিম বা ঠান্ডা জাতীয় খাবার না খাওয়ানো, শিশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে যত্নশীল হতে হবে। সর্দি কাশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

৫ বছরের জন্য স্থগিত ডা. স্বপ্নীলের চিকিৎসা সনদ

news image

দেশে আরও ২৪৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত 

news image

করোনা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই: ডা. সায়েদুর রহমান

news image

করোনার নতুন ধরন শনাক্ত, স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ

news image

ফিরতি যাত্রায় রেলে চড়তে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও মাস্ক পরে

news image

দেশে করোনায় আরেকজনের মৃত্যু হলো

news image

আবারো করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে দেশের মানুষ, ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৪

news image

এখনও বন্ধ চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতাল

news image

এবার যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডের ‘নতুন রূপ’ শনাক্ত

news image

এশিয়ায় মাথাচাড়া দিচ্ছে করোনার নতুন রূপ

news image

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৯ জন

news image

দেশের সব হাসপাতালে হচ্ছে সরকারি ফার্মেসি, মিলবে কম দামে ওষুধ

news image

যক্ষ্মার নতুন ঝুঁকিতে দেশ

news image

খাদ্যে ক্ষতিকর উপাদান শনাক্তে কঠোর নীতিমালার আহ্বান

news image

অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বাজেট বৃদ্ধির আহ্বান

news image

‘নতুন মহামারির’ হানা যুক্তরাষ্ট্রে, মৃত্যুহার ৩৯ শতাংশ

news image

বন্ধ হতে পারে সরকারি ৬ মেডিকেল কলেজ

news image

বকশিশ না দেওয়ায় অক্সিজেন বন্ধ, নবজাতকের মৃত্যু

news image

২ কোটি ২৬ লাখ শিশুকে ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে

news image

বরুণ ফুলের ঔষধি গুণ—প্রাকৃতিক চিকিৎসার এক বিস্ময়

news image

স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু

news image

অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে: ডা. ফরহাদ হালিম

news image

দেশে প্রথমবার জিকা ভাইরাসের ক্লাস্টার শনাক্ত

news image

দেশের সব মেডিকেল কলেজে ‘একাডেমিক শাটডাউন’ সোমবার 

news image

চীনে নতুন করোনা ভাইরাস শনাক্ত, মহামারির শঙ্কা

news image

শোল্ডার সার্জারির উন্নয়নে বাংলাদেশে বিশেষ কর্মশালা

news image

ফিরে দেখা: ‘ভারতে মেয়েদের জন্য ৬ মাসের মধ্যে ক্যান্সারের ভ্যাকসিন’

news image

আজ বায়ুদূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় ঢাকা

news image

বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ঢাকার বাতাস, জানালা বন্ধের পরামর্শ!

news image

অস্বচ্ছল চক্ষু রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান