সোমবার ২৩ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

রাণীশংকৈলে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প, শিল্পীরা ভুগছেন চরম দৈন্যতায়

কেবি ২৩ সেপ্টেম্বার ২০২৪ ১২:৪৩ পি.এম

শিল্পীরা ভুগছেন চরম দৈন্যতায় রাণীশংকৈলে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। এতে চরম আর্থিক দৈন্যতায় পড়েছেন এ শিল্পের কারিগররা। 

এক সময় এ উপজেলায় এ শিল্পের জিনিসপত্রের বেশ কদর ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে  এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় সিলভার, এলমনিয়াম ও প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীদের মাটির তৈরি  জিনিসপত্র পড়েছে হুমকির মুখে। আস্তে আস্তে এ শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।  একইসাথে মৃৎশিল্পীদের জীবন চলার পথে নেমে এসেছে নিদারুণ কষ্টে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। তাইতো সংসারের ঘানি টানতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। 

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে, কুমার পাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কুমাররা প্রথমে ভূমি থেকে কালো এটেল ও বালু মাটি সংগ্রহ করে, পরে পানি মিশিয়ে হাত ও পায়ের সাহায্যে কাঠের পিটনা দিয়ে থেতলে ছেঁনে চেঁচে মশ্রিণ করে নির্মাণ উপযোগি করে তুলে। এরপর বিভিন্ন আকার,আকৃতি দিয়ে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে। তারপর সূর্যের তাপে এগুলোকে রোদে শুকানো এবং সবশেষে তা আগুনে পোড়ানো হয়। 

এরপর প্রয়োজন মতো মনের মাধুরী মিশিয়ে রং লাগিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের মাটির তৈরি জিনিস। কেউ কেউ আবার এ কাজে চরকা ব্যবহার করেন। কিন্তু মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মতো ব্যবহার করছে না মানুষ। প্লাস্টিক, এলোনিয়াম ও সিলভারের বাহারি রকমের অত্যাধুনিক জিনিস বাজারে আসার কারণে দিনে দিনে মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিতে ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এ কারণে মৃৎশিল্পীদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। 

রাণীশংকৈল উপজেলার কেউটান, ভাংবাড়ি,জুঁগিপাড়া, হাঁড়িপাড়া, কাদিহাট, ঝুলঝাড়ি, বলিদ্বারাসহ বিভিন্ন এলাকার মৃৎশিল্পীরা এখন বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের সংসারে চলছে অভাবের হাহাকার। সামান্য আয়ে চলছে না তাদের সংসার। কুমারদের মাটি দিয়ে তৈরি জিনিস বর্তমানে প্লাস্টিক,সিলভার ও এলমনিয়ামের তৈরি সামগ্রীর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেনা।  বাধ্যহয়ে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। এ পেশার সাথে জড়িত প্রায় শতাধিক কুমার পরিবার এমন অভিযোগ করেন। সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা গেছে, কুমারপাড়ায় মৃৎশিল্পী নারী-পুরুষ ও তাদের পরিবার-পরিজনের দুঃখের করুন কাহিনী। তারা অভাব অনটনের কারণে তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে হিমশিম খাচ্ছে। আবার অনেকেই অভাবের কারণে তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়াসহ লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে। উপজেলার হোসেগাঁও কুমারপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী রানী পাল মাটি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি কাজের ফাঁকে ফাঁকে বলছিলেন "এখন আর আগের মতো হামার কুমার পাড়ার আয় রোজগার নাই। আগে হামরা চরকা দিয়া বিভিন্ন ধরনের জিনিস বানাচিনো। কিন্তু এখন চরকা ব্যবহার করা হয় না। কারণ চরকা দিয়া জিনিসপত্র বানালে ভালো দাম পাওয়া যায় না। 

তাছাড়া এখন আমাদের মাটি ও লাকড়ি কিনে আনতে  হয়। তাই বিক্রি করে মুনাফা খুবই কম হয়। শুধু পেটে-ভাতে খেয়ে কুনহো রকম  খেয়ে বেঁচে আছি বাহে"। ওই গ্রামের মৃৎশিল্পী বরুন পাল বলেন, "সামান্য আয়ে সংসার টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের তৈরি জিনিস আগের মত মানুষ ব্যবহার করে না। তিনি আরো বলেন আমার এক মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, লেখাপড়ার খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়। ভিটে বাড়ি ছাড়া আর কোন জমি নেই। 

আমি ও আমার স্ত্রী ১৫-১৬ বছর যাবৎ এ কাজ করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছি। আমাদের 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' কোনরকম বেঁচে আছি। আমাদের যদি সরকার একটু সাহায্য সহযোগিতা করতো তাহলে আমাদের এই বাপদাদার পেশাটা আমরা ধরে রাখতে পারতাম"। কেউটান গ্রামের মৃৎশিল্পী রাজেন পাল বলেন, "আমাদের বাপ দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে আমি এখন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করি। কারণ বাপ-দাদার পেশায় আগের মতো আয় রোজগার হয় না। মাটির কলস হাঁড়ি-পাতিল, মাটির ব্যাংক, বাচ্চাদের খেলনা,জাজোর, বইটা,দইয়ের পাতিল, মুটকি,গুড়ের পাউড়া,ভাপা পিঠার পাতিল,জলবিরা,ফুলের টপ,এসব জিনিসপত্র এখন আগের মত মানুষ ব্যবহার করে না। তাই বাধ্য হয়ে এই পেশা ছেড়ে আমি এখন মোবাইল সার্ভিসের কাজ করে সংসার চালাই"। হোসেনগাঁও কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পী  কালিদাস পাল বলেন, "এলমনিয়াম, প্লাস্টিক, সিলভার এসব জিনিসের কারণে মাটির জিনিসপত্র এখন আগের মতো ব্যবহার হচ্ছে না। এ পেশা ছেড়ে অনেকেই  আমার মত  অন্য পেশায় চলে গেছে। আমি এখন মোবাইল ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ,মোবাইলের বিভিন্ন উপকরণ  বিক্রি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি"।

এছাড়াও ভাংবাড়ি গ্রামের মৃৎশিল্পী লব পাল, জগমোহন পাল, নুকুল পাল, হরেন পাল, ঝুলঝাড়ি গ্রামের হিম্মত পাল,খলো পাল, কেউটান গ্রামের, মিনা পাল, শেফালী পাল ও হিরা পাল বলেন, "বাপ-দাদার পুরাতন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে  এ পেশায় এখনও কাজ করে কোনমতে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি"। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এসব মৃৎশিল্পীরা। তবে নিত্য ব্যবহারের জিনিসপত্রের ব্যবহার কমলেও বেড়েছে পোড়ামাটির গৃহসজ্জার চাহিদা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারো হারানো ঐতিহ্য ফিরানো যাবে এমনটাই মনে করছেন তারা। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক মৃৎশিল্প এ উপজেলার কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রেখেছে। আগে এ শিল্পের তৈরি জিনিসপত্র স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাতেও সরবরাহ করা হতো। তাই বাংলার এই আদি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সব ধরনের  সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন এ পেশায় জড়িতরা।

আরও খবর

news image

নুরুল হুদাকে ধরার সময় যে মব জাস্টিস হয়েছে তা কাম্য নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

অষ্টগ্রামে যৌথ অভিযানে মাদকসহ কারবারি আটক

news image

ময়মনসিংহের দুই সড়কে ঝরল ১০ প্রাণ

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ

news image

৮ অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে সন্ধ্যার মধ্যে

news image

মিঠামইনে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব

news image

এ যেন এক নির্মম নিয়তি!

news image

৫ রাজাকারকে কোপানো সেই মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের মৃত্যু

news image

ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড 

news image

অর্ধেকে নেমেছে চামড়ার দাম, বিপাকে কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

news image

সন্ধ্যার মধ্যে ১৩ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

২৫ বছর পর অক্ষত লাশ মিললো কুড়িগ্রামে

news image

আশুগঞ্জে সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে তলিয়ে গেছে পাথরবাহী বাল্কহেড

news image

বিজয়নগরে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার, সিএনজি জব্দ

news image

নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার হলো বান্দরবানে

news image

হাওরের সৌন্দর্যে পর্যটকের পদভারে মুখর কিশোরগঞ্জ

news image

শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ সমু চৌধুরী, রয়েছেন মাজারেই

news image

প্রথম দিনেই এক ট্রলারে উঠে এলো ৪৩ মণ ইলিশ

news image

কসবায় ঈদ পুনর্মিলনীতে বিএনপির ঐক্যের মহামিলন

news image

চার ঘণ্টার মুক্তি পেয়ে মাকে শেষ বিদায় সাংবাদিক রুপার

news image

বরগুনায় ডেঙ্গুতে একদিনে ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৭২ জন

news image

আড়াইহাজার ও কুমিল্লায় পুকুরে ডুবে ৪ কন্যাশিশুর মৃত্যু

news image

বিজয়নগরে ১৫৭ বোতল সিরাপসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

news image

চাঁদপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনীতে হামলায় ৬ জন আহত

news image

সৈয়দপুরে প্রখর তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন

news image

চট্টগ্রামে আরও একজনের করোনা শনাক্ত

news image

কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত

news image

বউ আনতে গিয়ে মাংস বিড়ম্বনায় বর খেলেন বেদম মার

news image

সিলেটে রিকশায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেলো নারী চিকিৎসকের

news image

স্ত্রীকে স্মরণ করে কাঁদলেন কাদের সিদ্দিকী