২ জন অংশ নেন সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যায়: টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন

এনএস ডেস্ক
আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্স আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেই প্রতিবেদনে উঠে আসে ওই সাংবাদিক দম্পতি আত্মহত্যা করেননি, খুন করা হয়েছে তাদের। এই হত্যাকাণ্ডে দুইজন অংশ নেন। তবে ডিএনএ অস্পষ্ট থাকায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি। 

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, তদন্তে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত কারণে খুনের তথ্য পায়নি টাস্কফোর্স। চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কিছু পাওয়া যায়নি ভিসেরা রিপোর্টেও। রান্না ঘরে থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা দু’জনই ক্ষত নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করে কেউ প্রবেশ করেনি বলেও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।

২০১২ সালে র‌্যাব মামলাটির দায়িত্ব নেয়। এর পর থেকে তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। উল্টো বছরের পর বছর ধরে এর তদন্তের প্রতিবেদন দাখিলের সময় পেছাতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের দায়িত্ব র‌্যাবের কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তদন্তের ভার বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তরেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এর পর চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে টাস্কফোর্সকে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন আদালত। তবে তারা এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি। টাস্কফোর্স এ পর্যন্ত নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

সম্প্রতি জমা দেওয়া টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাগর-রুনি রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুন হন। এছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি জানায়, প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হত্যায় সাগর বাধা দিতে পারে- এমন ধারণায় তার হাত-পা বাঁধা হয়। রুনি নারী হিসেবে দুর্বল চিন্তা করে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। ‘ব্লাড প্যাটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।

টাস্কফোর্সের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, রাতে হত্যার পর সকালে সেখানে পৌঁছান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ততক্ষণে গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের পায়ের ছাপে আলামত ধ্বংস হয়ে যায়। 

এদিকে সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানায়, একসঙ্গে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে শনাক্ত করা সম্ভব। সংখ্যায় এর বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ থাকায় তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর ভাড়া বাসায় খুন করা হয়।  বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে সাগর আর এটিএন বাংলায় রুনি কর্মরত ছিলেন।