৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন

এনএস ডেস্ক
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। কটকা-কচিখালা, দুবলা, শেলারচরসহ এখন পানির নিচে সমুদ্র উপকূলের বন। 

এদিকে, এতো উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রটিও বর্তমানে ৮০ সেন্টিমিটার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। 

এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে জলোচ্ছ্বাসে দুবলারচরে একটি হরিণ মারা যায়। শেলারচর টহল ফাঁড়ি এলাকার নদী থেকে ভেসে যাওয়া সময় একটি হরিণ উদ্ধার করেন বনরক্ষীরা। গোটা সুন্দরবনে জলোচ্ছ্বাসে কি পরিমাণ বন্যপ্রাণী মারা গেছে এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটিতে থাকা হরিণ, কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির বাটাগুর বাচকা কচ্ছপসহ নিরাপদ রয়েছে সব বন্যপ্রাণী। জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে অধিকাংশ পুকুর তলিয়ে গেছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে। 

এদিকে, বাগেরহাট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা পশুর, ভৈরব, বলেশ্বর, দড়াটানা, পানগুছিসহ সব নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক জোয়ারের চেয়েও দুই থেকে তিন ফুট বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের দু’টি পয়েন্টের শরণখোলার ও ফাশিয়াতলায় ৮০০ মিটার বেড়িবাঁধ। 

এছাড়াও আজ সারাদিন বৃষ্টিপাত নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে। বৈরী আবহাওয়ায় এখানকার সব অভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ লঘুচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। পানিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন টহল ফাঁড়ির অফিস ব্যারাক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তীব্র স্রোতে শেলারচর থেকে একটি হরিণ ভেসে যাওয়ার সময় বনরক্ষীরা তা দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন। পরে হরিণটিকে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে দুবলারচরে মারা গেছে একটি হরিণ। 

পর্যটন স্পট কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার আব্দুস সবুর বলেন, জলোচ্ছ্বাসে কটকার বন ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় অনেক হরিণ কটকা ফরেস্ট অফিসের পুকুর পাড়সহ উঁচু জায়গায় এসে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। 

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, এই প্রজনন কেন্দ্র নিম্নচাপের কারণে ৮০ সেন্টিমিটার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তবে এখানে থাকা সব বন্যপ্রাণী নিরাপদ রয়েছে। 

তবে গোটা সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এই বন কর্মকর্তা বলেন, বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস না হলে ছোটখাটো দুর্যোগে এই বনের অধিকাংশ বন্যপ্রাণী নিজেরা টিকে থাকার ক্ষমতা রপ্ত করে নিয়েছে। এছাড়া বনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বন অফিসের উঁচু এলাকা, পুকুর পাড় ও ও টিলায় বন্যপ্রাণীর আশ্রয় নিয়ে থাকে।   

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, জলোচ্ছ্বাসে পূর্ব সুন্দরবনের প্রায় সব পুকুর লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে বন্যপ্রাণীদের পান করা মিঠা পানির একমাত্র উৎস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।