শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে

নিউজ ডেক্স ৩০ মে ২০২৪ ০১:১৭ পি.এম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। সংলাপের মাধ্যমে সব দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন, চলমান যুদ্ধ বন্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ মানবজাতির কল্যাণে ব্যয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

বুধবার(২৯ মে) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’—বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের ১৩টি স্থানে ৪৯৩ জন নারীসহ ছয় হাজার ৯২ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যেখানে কাজ করছেন সেসব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, প্রশংসা শুনে গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজনস্বীকৃত এবং বিশ্বের বুকে রোল মডেল। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর টেকসই, পরিশ্রমী, নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও অমূল্য অবদান।

প্রধানমন্ত্রী ১৬৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর অবদানের কথা স্মরণ করেন, যারা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ করেছেন এবং ২৬৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। শান্তি রক্ষায় অবদান রাখতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সমবেদনা জানান তিনি।

স্বজন হারানোর বেদনা যে কী, তিনি তা জানেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৬ বছর উদযাপন করছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ এবং সবাই অত্যন্ত সুনাম ও গৌরবের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। 

তিনি এ সময় বিশ্বের নানা প্রান্তে কর্মরত সব বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শান্তি রক্ষা মিশন ছাড়াও অন্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতেও আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখছি।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘে ‘কালচার অব পিস’ (শান্তির সংস্কৃতি) প্রস্তাব উত্থাপন করে, যা ১৯৯৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সেই থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘ফ্লাগশিপ রেজল্যুশন’ এই ‘কালচার অব পিস’ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়ে আসছে। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব কালচার অব পিস’ হিসেবে ঘোষণা করে, যার মাধ্যমে শান্তির সংস্কৃতি প্রস্তাবের ২৫তম বর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে কালচার অব পিস প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য বলে আমার বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, যুদ্ধ আজ বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু; সেখানে গণহত্যা চলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা ইত্যাদি মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঠিক জানি না এই সংঘাত বা যুদ্ধ মানবজাতির জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনছে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ততই মানুষের জীবন আরো বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নারী-শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। যুবকরা অকাতরে জীবন দিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু সমাধান করতে চাই।

তিনি বলেন, বিশ্বে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। কোটি কোটি মানুষ দুই বেলা খাবার পায় না। রোগের চিকিৎসা পায় না। শিশুরা শিক্ষা পায় না। তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। যারা অস্ত্র তৈরি এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতায় এত অর্থ ব্যয় করছে, তাদের কাছে আমার আহ্বান—আমরা শান্তির কথা বলি কিন্তু সংঘাতে লিপ্ত হই কেন?

সরকারপ্রধান বলেন, এই যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, এই অর্থ যদি ক্ষুধার্ত মানুষের আহারের ব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থায় ব্যয় হতো তাহলে এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতো। মানুষের জীবনমান উন্নত হতো। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারত। কিন্তু এই সংঘাত প্রতিনিয়ত মানুষকে আরো কষ্টের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কাজেই আমি সব সময় যেখানেই যাই, এই একটি আহ্বানই জানাই—সংঘাত নয়, যদি কোনো সমস্যা থাকে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ।

তিনি আরো বলেন, সেই সঙ্গে এই অস্ত্র তৈরি আর প্রতিযোগিতার অর্থ যেসব দেশ এখনো জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে, সেই জলবায়ুর অভিঘাত থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য সেই তহবিলে দিতে পারেন। তাছাড়া ক্ষুধার্ত ও শিক্ষাবঞ্চিত যেসব শিশু, তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারেন। সেই আহ্বান আজকে আমি সবাইকে জানিয়ে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, নারীর অধিকার এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিতে তার সরকারের পদক্ষেপ ‘উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্ডা’ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বমাট তিন হাজার ৩৮ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলতার সঙ্গে মিশন সম্পন্ন করেছেন। এ জন্য আরো অধিক পরিমাণে নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণেরও দাবি উঠেছে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে আহত তিনজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। তিনি ইউএন পিসকিপার্স জার্নালের (দশম ভলিউম) মোড়কও উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের কৃতিত্বের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

খালেদা জিয়াকে ৪-৫ মে দেশে আনার প্রস্তুতি

news image

নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে শ্রমিকদের অবস্থা বদলাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

পুরোনো যানবাহন অপসারণের ঘোষণা বিআরটিএ'র

news image

আওয়ামী লীগ নেতা মায়া চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

news image

বাংলাদেশের জিআই পণ্য এখন ৫৫টি

news image

উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ!

news image

দলগুলোর সমর্থন না পেলে সব উদ্যোগ নিষ্ফল হবে : সিইসি

news image

ঢাকার ৫০ জায়গায় 'এয়ার পিউরিফায়ার', লক্ষ্য বায়ুদূষণ রোধ

news image

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন

news image

মার্চ মাসে দেশে ১৬৩ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার

news image

এবার ভিন্নধর্মী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি'র তিন সংগঠন

news image

মে মাসেই শুরু হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচার: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস

news image

রোম থেকে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

news image

আন্দোলনের মুখে স্থগিত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা

news image

এবার সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে বগুড়া

news image

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে ইসির গেজেট

news image

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

বিএনপি কর্মী হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের নামে মামলা

news image

লোডশেডিং হচ্ছে ও হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

news image

কবি দাউদ হায়দারের চিরবিদায়

news image

রোমে বাংলাদেশ হাউস পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

news image

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ

news image

বিসিএস প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বন্ধ হচ্ছে বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপানো

news image

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর স্থগিত

news image

তদন্ত ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা যাবে সরকারি কর্মচারীদের 

news image

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের আল্টিমেটাম, এনসিপি নেতাদের সমালোচনা

news image

সংস্কারের দিকে তাকিয়ে থাকবে না নির্বাচন কমিশন: সিইসি

news image

অনেক বাড়ির মালিকও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শিরীন-পলকসহ ১২ জন ৫ আগস্ট সংসদ ভবনে পালিয়ে ছিলেন

news image

হেফাজত নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: আসিফ নজরুল