রোববার ০৪ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

দূতাবাসের মিলিয়ন ডলার চুরি, উধাও তদন্ত ফাইল

নিউজ ডেক্স ০৭ জুন ২০২৪ ০৩:৩৬ পি.এম

সংগৃহীত ছবি সংগৃহীত ছবি

ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। আত্মসাৎ করেছে দূতাবাসের ১ লাখ ৭৬ হাজার ডলারের ইমার্জেন্সি ফান্ড। এছাড়া দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে কৌশলে সরানো হয়েছে আরো প্রায় সোয়া ৩ লাখ ডলার। সেই চুরির প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, শুধু সিডর ইমার্জেন্সি ফান্ড বা দূতাবাসের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট নয়, রাষ্ট্রদূতের বাসভবন (বাংলাদেশ হাউস) মেরামতেও ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। রাষ্ট্রদূতের রিপোর্ট, পররাষ্ট্র দফতরে জমা পড়া অভিযোগ থেকে এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

জানা গেছে, সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি লাগয়ো মেরিল্যান্ডে বেথেসডা হাইবরো এলাকায় থাকা বাংলাদেশ হাউস নির্মাণে। বাড়ির জমিসহ বাজারমূল্য (রিয়েলটর প্রতিষ্ঠান রেডফিন ও জিলোর তথ্য) ৪.২৩ মিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৫.১ মিলিয়ন ডলার। বাড়িটি মেরামতেই (কাঠামোগত সংস্কার এবং সৌন্দর্য্য বর্ধনে) বিল দেখানো হয়েছে ৬ মিলিয়ন ডলার।

৬০ কোটি টাকায় সংস্কার করা বাড়িতে এতটাই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে যে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়িটি উদ্বোধনের কয়েক মাস পর ছাদে ফাটল ধরেছে। সামান্য বরফ জমলে বা ঝড়বৃষ্টিতে ঘরের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবেশ করে। ঐ বাড়িতে রাষ্ট্রদূত, তার পরিবার এবং ব্যক্তিগত কর্মচারীরা বসবাস করলেও মান-সম্মান হারানোর ভয়ে কূটনৈতিক পার্টির আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি সরেজমিন দেখে দ্রুত পুনঃসংস্কারের ব্যবস্থা নিতে ঢাকায় দফায় দফায় আর্জি জানাচ্ছেন বর্তমান রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ।

ওয়াশিংটনে সিস্টেমেটিক দুর্নীতি নিয়ে রহস্যজনক কারণে শুরু থেকেই লুকোচুরি চলছে। ওয়াশিংটন মিশনের ১ লাখ ৪৬ হাজার ডলার খোয়া যাওয়া নিয়ে ঘটনার অংশবিশেষ তুলে ধরে গত বছরের মার্চে একটি প্রতিবেদন হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি তদন্তে তখন ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নাম প্রস্তাব করে একটি ফাইলও হয়েছিল। কিন্তু আজ অবধি তদন্তটি হয়নি।

সূত্রের দাবি, ওয়াশিংটনের পুকুর চুরির বিস্তৃত তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন অবধি ফাইলটি উঠেছিল। মন্ত্রী বদল হয়েছে, কিন্তু আজও নামেনি ফাইলটি। এটি রহস্যজনক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দূতাবাসের অর্থ গেছে ক্যাসিনোতে
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বেহাত হওয়া কয়েক লাখ ডলারের (ইমার্জেন্সি তহবিল) একটি বড় অংশ ক্যাসিনোতে গেছে বলে দূতাবাসকে জানিয়েছে আমেরিকান সিটি ব্যাংক। তারা এর প্রমাণ হিসেবে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তার এটিএম কার্ডের বিস্তারিত শেয়ার করেছে। আচমকা দূতাবাসের ডরমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন এবং কয়েক মাসের ব্যবধানে অ্যাকাউন্টটি খালি করার বিষয়টি সন্দেহজনক ঠেকে আমেরিকান সিটি ব্যাংকের ম্যানেজার (ভাইস প্রেসিডেন্ট) সাচা খানের কাছে। তিনি চিঠি দিয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করেন।

ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিনের বিদায় এবং পরবর্তী রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্তে (ট্রানজিশন পিরিয়ডে) অ্যাকাউটটি খালি করার ঘটনা ঘটে। তখন দূতাবাসের তৎকালীন হেড অব চ্যান্সারি (ডিডিও’র বাড়তি দায়িত্ব) ছিলেন ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। তার স্বাক্ষরে ব্যাংকের হিসাবটি ক্লোজ করা হয়। ২০২১ সালের মার্চে অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ হলেও তা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ দূর না হওয়ায় পরবর্তীতেও দূতাবাসের সঙ্গে চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। ওয়াশিংটন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানাজানির পর রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু বিষয়টি যাতে কোনো অবস্থাতেই গণমাধ্যমে প্রকাশ না পায় এজন্য অফিসারদের নিয়মিত বিরতিতে ডেকে ব্রিফ করে সম্ভাব্য সব ছিদ্র বন্ধ করা হয়। অনেকটা নীরবেই তথ্যানুসন্ধান শুরু হয় এবং ঘটনার সত্যতা পায় সরকার।

দায়িত্বশীলরা জানান, কী অজুহাত দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ওই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে, এর ব্যয় কীভাবে দেখানো হয়েছে? অর্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়া এবং কার কার মধ্যে এটি ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে তা-ও তখন খোঁজা হয়। কিন্তু ততক্ষণে একটি পক্ষ তৎপর হয়ে ওঠে সেই অনুসন্ধান বন্ধ করতে। 

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হলে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। সঙ্গত কারণেই অর্থ লুটের বিষয়টি তখন ছাইছাপা পড়ে যায়। স্মরণ করা যায়, যেকোনো দূতাবাসের আয়-ব্যয়ে একটি অ্যাকাউন্ট থাকে। যাকে মাদার বা মূল অ্যাকাউন্ট বলা হয়। সরকারের অনুমতি নিয়ে বাড়তি অ্যাকাউন্ট খোলা বা বন্ধ করতে হয়। ‘সেভিংস ফর ইমার্জেন্সি’ ছিল ওয়াশিংটন মিশনের স্বতন্ত্র অ্যাকাউন্ট। যার নাম্বার ছিল সিটি বিজনেস আইএমএমএ-১৫২৮৩৩২১।

সূত্রমতে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর ইমার্জেন্সি ওই হিসাব খোলা হয়েছিল। শুরুতেই এতে জমা হয়েছিল বেশ অর্থ। কিন্তু অনেক দিন এতে লেনদেন না হওয়ায় অ্যাকাউন্টটি ‘ডরমেন্ট’ অবস্থায় চলে যায়।

থার্ড পার্টি দিয়ে নির্মাণ ব্যয় নিরীক্ষার চেষ্টা সফল হয়নি
রাষ্ট্রদূতের বাড়িটির নির্মাণকাজে কতটা অনিয়ম হয়েছে তা বুঝতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিরীক্ষার চেষ্টা করেছিলেন একজন রাষ্ট্রদূত। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির চাপে এ নিয়ে তিনি বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি। স্থানীয় রিয়েলটরদের বিবেচনায় বাংলাদেশ হাউসে যে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে তার ব্যয় কোনো অবস্থাতেই ৩ মিলিয়নের বেশি হওয়ার কথা নয়।

জমির পরিমাণ, বিদ্যমান অবকাঠামো এবং ইন্টেরিয়র বিচেনায় বিভিন্ন রিয়েলটর প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাড়িগুলোর ইভালুয়েশন করে দাম নির্ধারণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রিয়েলটর প্রতিষ্ঠান জিলো তাদের ওয়েবসাইটে 4  Highboro Ct, Bethesda, MD 20817, USA (বাংলাদেশ হাউস) বাড়িটির জমিসহ মূল্য দেখিয়েছে ৫.১ মিলিয়ন ডলার। অন্য প্রতিষ্ঠান রেডফিন পুনর্নির্মাণকৃত ওই বাড়িটির জমিসহ মূল্য দেখিয়েছে ৪.২৩ মিলিয়ন ডলার। 

তদন্ত ফাইল গায়েব এবং...
ওয়াশিংটনে চুরির তদন্তের ফাইল গায়েবের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশাসন অনুবিভাগ। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, ফাইলটি গায়েব নয় বরং এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। গত বছরে নেয়া তদন্তের নীতিগত সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের আগে ফাইলটি উঠেছিল বলে তা এখন অনেকটাই অকার্যকর। মন্ত্রী পদে পরিবর্তনসহ নানা কারণে পূর্বের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি নতুনভাবে উপস্থাপন করে তার মতামত নিয়েই স্পর্শকাতর ওই ঘটনার তদন্ত করতে হবে, এটাই সঙ্গত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ওয়াশিংটনের ঘটনার ব্যাপারে এখনো তিনি অবহিত নন। গত ৫ মাসে বিষয়টি মন্ত্রীর নোটিশে আনা হয়নি বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন।

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

কারও প্রতিপক্ষ নয় ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ

news image

খালেদা জিয়াকে ৪-৫ মে দেশে আনার প্রস্তুতি

news image

নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে শ্রমিকদের অবস্থা বদলাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

পুরোনো যানবাহন অপসারণের ঘোষণা বিআরটিএ'র

news image

আওয়ামী লীগ নেতা মায়া চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

news image

বাংলাদেশের জিআই পণ্য এখন ৫৫টি

news image

উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ!

news image

দলগুলোর সমর্থন না পেলে সব উদ্যোগ নিষ্ফল হবে : সিইসি

news image

ঢাকার ৫০ জায়গায় 'এয়ার পিউরিফায়ার', লক্ষ্য বায়ুদূষণ রোধ

news image

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন

news image

মার্চ মাসে দেশে ১৬৩ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার

news image

এবার ভিন্নধর্মী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি'র তিন সংগঠন

news image

মে মাসেই শুরু হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচার: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস

news image

রোম থেকে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

news image

আন্দোলনের মুখে স্থগিত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা

news image

এবার সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে বগুড়া

news image

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে ইসির গেজেট

news image

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

বিএনপি কর্মী হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের নামে মামলা

news image

লোডশেডিং হচ্ছে ও হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

news image

কবি দাউদ হায়দারের চিরবিদায়

news image

রোমে বাংলাদেশ হাউস পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

news image

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ

news image

বিসিএস প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বন্ধ হচ্ছে বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপানো

news image

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর স্থগিত

news image

তদন্ত ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা যাবে সরকারি কর্মচারীদের 

news image

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের আল্টিমেটাম, এনসিপি নেতাদের সমালোচনা

news image

সংস্কারের দিকে তাকিয়ে থাকবে না নির্বাচন কমিশন: সিইসি

news image

অনেক বাড়ির মালিকও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শিরীন-পলকসহ ১২ জন ৫ আগস্ট সংসদ ভবনে পালিয়ে ছিলেন