শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

বিষধর রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বাড়ছে, আতঙ্কে কৃষক

নিউজ ডেক্স ০৯ জুন ২০২৪ ০১:৩৮ পি.এম

সংগৃহীত

দিন দিন বাড়ছে রাসেলস ভাইপার। এতে আতঙ্কে রয়েছে কৃষক । রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ, অনেকে আবার উলুবোড়া নামেও জানেন একে। বৈজ্ঞানিক নাম ডাবোয়া রাসেলসই। ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে দেশে মহাবিপন্ন গোত্রভুক্ত করা হয়। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিষধর এ সাপ মাঝে কয়েক বছর খুব কম দেখা গিয়েছিল। তবে এক দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে  এর উপদ্রবত আবার বাড়ছে। এ সাপের কামড়ে বেড়েছে মৃত্যুও। সেই সাথে বদলাচ্ছে সাপটি তার স্বাভাবিক চরিত্রও ।

বিভিন্ন স্থানে রাসেলস ভাইপার ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে গবেষকরা জানান, বাংলাদেশে আগে থেকে রাসেলস ভাইপারের অস্তিত্ব ছিল। তবে ২০১০ সালের দিকে বন্যার পানিতে গঙ্গা-পদ্মা হয়ে ভেসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহারসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে এ বিষধর সাপ বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

পদ্মার মধ্যবর্তী চরাঞ্চল ও তীরবর্তী লোকালয়ের প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটারের মধ্যে এদের বিচরণ। তবে বন্যার সময় সাপটি মূল পদ্মা নদী, উপনদী, ছোট ছোট শাখানদী, খাল-বিল ও বড় বড় ড্রেনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এরা কৃষি খেত ও বিভিন্ন জঙ্গলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে আস্তানা তৈরি করে।

 বর্তমানে দেশের ২৮টি জেলায় এর বিচরণ ও উপদ্রব পাওয়া গেছে। জেলাগুলো হলো রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম। ভবিষ্যতে এর সংখ্যা ও বিস্তৃতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাপ যেহেতু বেশির ভাগ সময় মাটির নিচে ও জঙ্গলের ভেতরে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পচ্ছন্দ করে, তাই এর সঠিক সংখ্যা বলা সম্ভব না।

গত এক মাসেই রাজশাহীর চারঘাট, গোদাগাড়ী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, চাঁদপুরের মতলবসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা পাওয়া গেছে রাসেলস ভাইপারের। গত তিন মাসে পদ্মার তীরবর্তী মানিকগঞ্জে অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন এ সাপের দংশনে। বিষধর এ সাপ নিয়ে দেশে এখন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এতটা জটিল আকার ধারণ করেছে যে কোথাও কোথাও আতঙ্কে জমিতে কাজ করতে যাচ্ছেন না কৃষক। কৃষকরা জানান, মাঠ ভরা পাকা ফসল থাকলেও সাপের ভয়ে মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপের এখন প্রজননকাল চলছে, তাই দেখাও যাচ্ছে বেশি। তবে রাসেলস ভাইপারের অভিযোজন ক্ষমতাও বেড়েছে। আসন্ন বর্ষাকালে পদ্মার অববাহিকা ধরে সাপের যাতায়াত আরও সহজ হবে। তাই সামনে রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। সাপটি দংশনের সময় সর্বোচ্চ পরিমাণে বিষ ঢেলে দেয়। তাই দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা নিতে না পারলে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে।

দেশে প্রায় ১০৪ প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩০ প্রজাতির সাপ বিষধর। সবচেয়ে বিষধর হলো রাসেলস ভাইপার। চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টার তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভীষণ রকমের বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার আছে ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন ও মিয়ানমারে। এ সাপ সাধারণত ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে বাস করে।

দেশে কয়েক বছর ধরে রাসেলস ভাইপারের বিচরণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে গাজীপুরের শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের সরীসৃপ-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সোহেল রানা বলেন, রাসেলস ভাইপার বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল। এটি মূলত শুষ্ক জায়গার সাপ। বরেন্দ্র অঞ্চলে এক ফসলি মাঠে ইঁদুর খেতে এর আনাগোনা ছিল বেশি। তবে এখন সেসব এলাকায় অন্য সময়েও ফসল হচ্ছে, ইঁদুর বাড়ছে। এ প্রাকৃতিক চক্রে রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বাড়ছে।

সোহেল রানা আরও বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে রাসেলস ভাইপারের। ফলে শুষ্ক অঞ্চল থেকে কচুরিপানার মতো যেকোনো ভাসমান কিছুর সঙ্গে ভেসে এটি নদীর ভাটির দিকে চলে যেতে পারছে। মূলত পদ্মা অববাহিকা ধরে এর সংখ্যা বাড়লেও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। হাতিয়া, ভোলায়ও এই সাপ দেখা গেছে।

সোহেল রানা জানান, এই সাপ যেহেতু ডিম না দিয়ে সন্তান প্রসব করে, ফলে সাপের বাচ্চাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাসেলস ভাইপার সাধারণত ফোঁস ফোঁস শব্দ বেশি করে। অন্য সাপ মানুষকে দংশনের পর সেখান থেকে দ্রুত সরে যায়, কিন্তু রাসেলস ভাইপার ঘটনাস্থল থেকে সরতে চায় না।

রাসেলস ভাইপার স্থলভাগের সাপ হলেও এটিকে পানিতে দ্রুতগতিতে চলতে দেখেছেন বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান। তিনি বলেন, অর্থাৎ এটি মাটি ও পানি উভয় স্থানে এখন স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখছে রাসেলস ভাইপার।

‘রাসেলস ভাইপারের পুনরাবির্ভাব ও মানুষের ঝুঁকি’ বিষয়ে গবেষণা করছেন অধ্যাপক ফরিদ আহসান। তিনি বলেন, এই সাপের প্রজননকাল বছরের যেকোনো সময়ই। তবে মে থেকে পরের তিন মাস প্রজনন সবচেয়ে বেশি ঘটে। সাপটি এখন পানিতে চলতে পারে বলে বর্ষাকালে কচুরিপানার সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত ভেসে নিজের স্থানান্তর ঘটাতে পারে।

অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলেন, আশির দশকেও সাপটি ছিল বাংলাদেশে। তবে তখন গবেষণা হতো না বলে মানুষের জানাশোনা ছিল কম। তবে এখন চরাঞ্চল বা নদীর তীরবর্তী মানুষকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

প্রাণহানি ও সচেতনতা কার্যক্রম

মার্চ থেকে মে এই তিন মাসে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলেই বিষধর রাসেলস ভাইপারের দংশনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পাঁচজন।

এ ছাড়া গত মাসে এক দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দুজন মারা যান। এ ঘটনায় আতঙ্ক দেখা দেয়। ধান কাটতে গিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর পর ধানকাটার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায় বেশি। রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী শাকিনুর রহমানের বাড়ি চারঘাটে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

৩ জুন একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত পদ্মার তীরবর্তী রাজশাহী, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় রাসেলস ভাইপারের দংশনে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হরিরামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, তিনটি ইউনিয়ন আজিমনগর, সুতালড়ি ও লেছড়াগঞ্জ পদ্মা নদীর মধ্যবর্তী এলাকা হওয়ায় এসব স্থানে সাপের উপদ্রব বেশি। এখান থেকে মানিকগঞ্জ সদরে যেতে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় লাগে, যা সাপের দংশনের রোগীর জীবনঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য এলাকায় মাইকিং করে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

ইউএনও বলেন, পায়ে বুট পরে ফসলের মাঠে যেতে কৃষকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে মুঠোফোনে ‘সর্প দংশনে সচেতনতা’ নামে একটি অ্যাপস রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার (এনসিডিসি) ২০২৩ সালের এক গবেষণা বলছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ ৩ হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। এর মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার মানুষ মারা যান। এ ছাড়া সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের ১০ দশমিক ৬ শতাংশ শারীরিক ও ১ দশমিক ৯ শতাংশ মানসিক অক্ষমতায় ভোগেন।

নবীন নিউজ/জেড
 

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

নারায়ণগঞ্জে গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী ঢামেকে ভর্তি

news image

একসঙ্গে দুই বোনের প্রাণ গেল পুকুরে

news image

এ মাসে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়-কালবৈশাখী, থাকবে তাপপ্রবাহ

news image

নাফ থেকে চার জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

news image

প্রতিবন্ধী সন্তানের যন্ত্রণা সইতে না পেরে...

news image

আনোয়ারায় পাহাড় ধসে ২ শিশু নিহত, গুরুতর আহত ২ শিশু

news image

কসবায় ৭০ লাখ টাকার ভারতীয় চশমা জব্দ

news image

মৎস্য আড়তে অভিযান ৭০ কেজি জাটকা জব্দ

news image

বুধবার বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

news image

ঝিনাইগাতীতে অবৈধ বালু পরিবহন: দুইজনের কারাদণ্ড, ৯টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস

news image

গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ তাসলিমা মারা গেলেন

news image

রাজধানীসহ দেশের ১৬ অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

বিজয়নগরে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০

news image

৫ জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের প্রাণহানি

news image

গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: দগ্ধ সীমার মৃত্যু, ৪ জন আশঙ্কাজনক

news image

গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৫

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কারাগারে থাকা হাজতির মৃত্যু

news image

বিএসএফের গুলিতে ঝিনাইদহ সীমান্তে একজন নিহত

news image

সোমবার থেকে তাপপ্রবাহ কমতে পারে

news image

এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল আরোহী নিহত

news image

আজও থাকবে তাপের উত্তাপ

news image

গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫

news image

নোয়াখালীতে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

news image

আখাউড়ায় বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী আহত

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭৮ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার এক

news image

ঈশ্বরদীতে চরের জমি নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে চারজন গুলিবিদ্ধ

news image

হবিগঞ্জে সমিতির দখল নিয়ে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

news image

দেশজুড়ে তাপপ্রবাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস

news image

লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সেমিনার অনুষ্ঠিত

news image

শ্রীমঙ্গলে বিট পুলিশিং সভায় অপরাধ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান