মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

আয় ১২ লাখ, খরচ ৩৭ লাখ, কেন ক্ষতির সম্মুখীন বঙ্গবন্ধু টানেল?

নিউজ ডেক্স ০৯ জুন ২০২৪ ০১:৫৪ পি.এম

সংগৃহীত

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মূল দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এটি দেশের নদীর তলদেশের প্রথম টানেল। চীনা ঋণ ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এই টানেল তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী যানবাহন চলছে না। ফলে টোল আদায় কম হচ্ছে। আয়ের চেয়ে টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় এখন পর্যন্ত বেশি।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) সূত্র জানিয়েছে, এ বছর থেকে টানেলের জন্য নেওয়া চীনা ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হবে। আয় কম হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অন্যান্য সেতুর আয় থেকে মেটাতে হবে। ফলে ঋণ পরিশোধে সরকারকে রাজস্ব খাত থেকে ভর্তুকি দিতে হবে। টানেল দিয়ে যানবাহনে কর্ণফুলী নদী পার হতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট সময় লাগছে। ফলে মানুষের চলাচল সহজ হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, টানেলের এক পাশে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি।

সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে টানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত দিনে গড়ে সাড়ে চার হাজারের কিছু বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। পূর্বাভাস ছিল, এর অন্তত চার গুণ যানবাহন চলবে। টানেল থেকে টোল বাবদ দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এই টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ দিনে ব্যয় গড়ে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে ‘কনস্ট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ শীর্ষক টানেল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। তবে নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে।

চীনা ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ। এর সঙ্গে আছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর। এর মধ্যে ঋণ নেওয়া ও কিস্তি শোধ শুরুর মধ্যকার বিরতি (গ্রেস পিরিয়ড) হিসেবে পাঁচ বছর সময় অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত প্রথম কিস্তি পাওয়ার পরের পাঁচ বছরকে গ্রেস পিরিয়ড ধরা হয়। চীনেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) টানেলটি নির্মাণ করেছে। এখন তাদেরই পাঁচ বছরের জন্য টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। তাদের দিতে হবে ৯৮৪ কোটি টাকা।

চীনা ঋণ প্রকল্পের প্রধান শর্ত হলো, তাতে চীনা ঠিকাদার কাজ করবে, কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয় না। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের শর্তের প্রকল্পে ব্যয় অনেক বেশি হয়। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিকাদারকে যে টাকা দেওয়া হবে, এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে স্ক্যানার কিনতে। রক্ষণাবেক্ষণে পাঁচ বছরে প্রকৃত ব্যয় ৬৮৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে রক্ষণাবেক্ষণের দৈনিক ব্যয় দাঁড়ায় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা।

বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারের মোট ব্যয় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। টানেল প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, ভারত ও চীনে অবকাঠামো নির্মাণে নিজেদের জনবল, যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ উপকরণের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। এ জন্য খরচ বেশি পড়ে।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে ব্যয় কমানো সম্ভব হতো। যদি কর্ণফুলী নদীতে ঝুলন্ত সেতু করা হতো, তাহলে অনেক কম টাকা খরচ হতো। এছাড়াও ২০২০ সালের জায়গায় টানেল চালু হয়েছে ২০২৩ সালে। সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে চালুর পর ৬ মে পর্যন্ত দিনে যানবাহন চলেছে গড়ে ৪ হাজার ৬১৩টি করে। টোল আদায় হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা। দিনে গড়ে আয় হয়েছে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। শুরুর চেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যানবাহন চলাচল কমেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সরকারের সেতু বিভাগের অধীন সংস্থা সেতু কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির প্রকৌশলীরা বলছেন, টানেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর অনেক দিন হরতাল ও অবরোধ চলেছে। এ কারণে যান চলাচল কম হয়। কিন্তু দৈনন্দিন যানবাহন চলার প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরুতে টানেল দেখার জন্য অনেকে গাড়ি নিয়ে গেছেন। সাম্প্রতিককালে বরং যান চলাচল কমেছে।

সংস্থাটির সূত্র বলছে, টানেলটি দিয়ে ভারী যানবাহন বেশি চলাচল করবে বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেশি চলেছে ব্যক্তিগত গাড়ি বা প্রাইভেট কার। টানেল দিয়ে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ।

কর্ণফুলী টানেল হলে চীনের সাংহাই শহরের মতো চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনে’র মডেলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকারের। কিন্তু চট্টগ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে শহর সম্প্রসারণ বা সেখানে পরিকল্পিতভাবে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে সিডিএ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দৃশ্যত কোনো কার্যক্রম নেই।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, টানেলের তখনই ভালো ব্যবহার হবে, যখন চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হবে। মেরিন ড্রাইভ হয়ে গেলে তখন এর পাশে নানা ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এসব কারখানার পণ্যবাহী যানবাহন টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচল করবে। যদি তা না হয়, টানেল একরকম অব্যবহৃত থেকে যাবে।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে টিউলিপের উকিল নোটিশ

news image

এনবিআরে কাফনের কাপড় পরে কলম বিরতি শুরু

news image

সাবেক সিইসিকে লাঞ্ছিত ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি

news image

জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজধানীর অনেক এলাকা

news image

পৃথক সচিবালয় হলে হস্তক্ষেপ মুক্ত হবে বিচার বিভাগ: প্রধান উপদেষ্টা

news image

পাশ হওয়া বাজেটে বিশেষ সুবিধা বাড়লো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

news image

দেশে এক দিনে করোনায় পাঁচ মৃত্যু, শনাক্ত ৩৬ জন

news image

'জুতার মালা' দিয়ে সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে পুলিশে সোপর্দ

news image

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর তিন সন্তানের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

news image

ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

২৪ ঘণ্টায় করোনায় দুই জনের মৃত্যু

news image

২৬ জুন শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা

news image

সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি

news image

৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর

news image

বিটিভি বেতারের স্বায়ত্তশাসনে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন

news image

৫ আগস্ট সরকারি ছুটি পালন করা হবে

news image

মহাখালী থেকে সরানো হচ্ছে বেনসন-গোল্ড লিফের কারখানা

news image

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

news image

এইচএসসি পরীক্ষা: কেন্দ্রে মানতে হবে ৭ নির্দেশনা

news image

নির্বাচনী আচরণবিধি ও সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমিশন সভা আজ

news image

বেরোবি'র সাবেক ২ উপাচার্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

news image

সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলন থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

news image

জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে অধ্যাদেশ জারি, সুবিধা নিলে ২ বছরের দণ্ড

news image

আরও ১৫৮ বাংলাদেশী লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন

news image

ঢাকাসহ ১৮ অঞ্চলে রাতের মধ্যে ঝড় হতে পারে

news image

ভিসা কার্যক্রম পুনঃরায় চালু: অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানালেন ড. ইউনূস

news image

‘তেহরানে দূতাবাসের ৪০ বাংলাদেশীকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে’

news image

যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছি, তাই জ্বালানির দাম এখনই বাড়াচ্ছি না: অর্থ উপদেষ্টা

news image

বিলম্ব ফি দিয়ে এইচএসসির ফরম পূরণ করা যাবে ২ দিন

news image

৫ দেশে নতুন মিশন খুলবে বাংলাদেশ