মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
রাজনীতি

জনগণের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর প্লাটিনাম জুবিলি

কেবি ২২ জুন ২০২৪ ০৪:১০ পি.এম

আওয়ামী লীগ প্লাটিনাম জুবিলি জনগণের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এ দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসা¤প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হক।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই কেটে গেছে লড়াই আর সংগ্রামে। হত্যা, ষড়যন্ত্র—সবই দেখেছে দলটি। এরই মধ্যে ৭৪ বছর পূর্ণ করল আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেয়া দলটির ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ৭৫ বছরে পা দিল টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকা দলটি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। ‘বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ’—ইতিহাসে এ তিন নাম একই সূত্রে গাঁথা।

পাকিস্তানের সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছে দলটি। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪-এর দাঙ্গার পর সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপসহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সমগ্র জাতির জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু সরকার স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আন্তর্জাতিক শক্তির সহযোগিতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। তারপর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এর পর থেকে তিনি শক্ত হাতে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

একুশ বছর লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। মাঝে এক মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দলের আইভী রহমান সহ অনেক নেতাকর্মী নিহত হন ও আহত হন। ২০০১ ও ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আরেক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় দলটি। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মানবতার জননী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে যা মোটেও সহজ কাজ নয়। এসব একমাত্র শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হচ্ছে।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন হয়েছে। সারা দেশে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার স¤প্রসারণ এবং গুণগত মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে, মহিলা ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে। 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে মৌলিক চিকিৎসা চাহিদা পূরণ, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল, অসংক্রামক রোগগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ব্যাপক উদ্যোগ, পুষ্টি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সূচকগুলোর ব্যাপক অগ্রগতিতে স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে অভ‚তপূর্ব অর্জন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে বহু দূর। 

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও পরিশ্রমের ফসল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনায় বৈশিক মহামারী কভিড-১৯-এর করালগ্রাস থেকে দেশের আপামর মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশাল অবদান রেখেছে। উদ্বোধন হয়েছে বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও ঢাকা মেট্রোরেল। এছাড়া চলমান রয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলো।
১৯৮১ সালের ১৭ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃসাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই আওয়ামী লীগ আজ দল হিসেবে অনেক বেশি শক্তিশালী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৯ বছরের অধিক সময় প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বাংলাদেশে এর আগে কেউ এত বছর সরকারপ্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে পারেননি। এর বাইরে ১১ বছরেরও বেশি সময় তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ৩০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি আজ তার নেতৃত্বে সামরিক শাসনের স্মৃতি পেছনে ফেলে দেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছে। তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে, জাতি হিসেবে বাঙালিকে এবং দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক ভিন্ন উচ্চতায়। 
আওয়ামী লীগের মোট ২৪ বছরের শাসনামলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ২ হাজার ৭৮২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ছিল ৯৯ মার্কিন ডলার। 
বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপন হয়েছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে সাফল্য এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জঙ্গি দমনে সাফল্য সারা বিশ্বে আলোচিত। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, গৃহহীনদের গৃহ প্রদান ও মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকুক— আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জুবিলি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটাই সাধারণ মানুশের প্রত্যাশা।

লেখক: সদ্য সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

এনসিপির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে চারজন আহত

news image

গ্রেপ্তার হলেন সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন

news image

গ্রেপ্তার হলেন সাবেক এমপি ফয়সাল বিপ্লব

news image

এবার ১৬ জনের স্ক্রিনশট তুলে ধরলেন নীলা ইসরাফিল

news image

ইসিতে দল ও প্রতীক নিবন্ধনের আবেদন জানালো এনসিপি

news image

তিন নির্বাচন: শেখ হাসিনা ও সাবেক ৩ কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা

news image

আজ রাতে চীন যাচ্ছে বিএনপির প্রতিনিধি দল

news image

সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি বিএনপির

news image

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন বিদায়ী জার্মান রাষ্ট্রদূত

news image

এনসিপির খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন, নিবন্ধনের আবেদন ২২ জুন

news image

শিগগিরই দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারেক রহমান: খসরু

news image

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নতুন সুযোগ এসেছে, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: ফখরুল

news image

এনসিসি গঠনের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি: সালাহউদ্দিন

news image

জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ আজ

news image

খালেদা জিয়া হাসপাতালে যাবেন আজ

news image

বিএনপির বিরুদ্ধে ভয়ংকর অপপ্রচারের অভিযোগ রিজভীর

news image

বিএনপি মহাসচিব-ব্রিটিশ হাইকমিশনার বৈঠক

news image

কবে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

news image

সময়মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: আমীর খসরু

news image

নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদ ঘোষণা ও কার্যকরের পরে: এনসিপি

news image

‘লন্ডনে দুই নেতার বৈঠক জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে’

news image

ড. ইউনূসকে বই ও কলম উপহার দিলেন তারেক রহমান

news image

খালেদা জিয়াকে সালাম জানালেন ড. ইউনুস

news image

প্রধান উপদেষ্টা বললেন, 'চলছে, টেনেটুনে'

news image

ইউনূস-তারেক বৈঠক: যৌথ বিবৃতিতে যা বলা হলো

news image

'ইটস অ্যা রিয়েল অনার ফর মি'

news image

'দেশে বিএনপির জন্য সময় না থাকলেও বিদেশে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা'

news image

ভারতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন তারেক রহমান

news image

শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: ডা. জাহিদ হোসেন

news image

আজীবনের জন্য বহিষ্কার হলেন রাজশাহীর দুই বিএনপি নেতা