দেশে সারের কোন সংকট নেই : কৃষি উপদেষ্টা

এনএস ডেস্ক : দেশে সারের কোন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, ‘দেশে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যাপ্ত সারের মজুদ রয়েছে, কোন সংকট হবে না। কৃষকরা চাহিদা মাপিক সার কিনতে ও ব্যবহার করতে পারবেন। 

উপদেষ্টা আজ শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বন্যার্তদের পুনর্বাসনে গৃহীত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-এর কার্যক্রম সর্ম্পকে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ও মন্ত্রণলয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দপ্তর এবং সংস্থা প্রধানরা।

সভায় মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা আরও বলেন, স্বাভাবিক রয়েছে সার আমদানি প্রক্রিয়া। ভবিষ্যতে সংকট হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে কেউ যেন অতিরিক্ত সার কেনা বা মজুদ না করে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। বন্যায় যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম স্বচ্ছতার সাথে দ্রুত শেষ করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট থেকে আকস্মিক বন্যায় দেশের ২৩ জেলার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব জেলায় মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর। ফসল উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫১৪ মে.টন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৯ জন কৃষক। বন্যায় আক্রান্ত ২৩ জেলার মোট আবাদ করা ফসলের শতকরা ১৪.৫৮ ভাগ নষ্ট হয়েছে।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ৭ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ- ফেনী ৩৫ হাজার ৬৭৩ হেক্টর (৮০%), নোয়াখালী ৩৮ হাজার ৪৫৬ হেক্টর (৩৭%), কুমিল্লা ৪৯ হাজার ৬০৮ হেক্টর (৩৬%), লক্ষ্মীপুর ১৫ হাজার ৬২৬ হেক্টর (৩৩%), চট্টগ্রাম ২৩ হাজার ৯৯২ হেক্টর (১৬%), মৌলভীবাজার ১৫ হাজার ২২২ হেক্টর (১২%) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৮.৩২৬ হেক্টর (৩৫%)।

বন্যায় জেলাগুলোর রোপা আমন এক লাখ ৪১ হাজার ৬০৯ হেক্টর, আউশ ৩৮ হাজার ৬৮৯ হেক্টর, বোনাআমন ৭৬৪ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ১৪ হাজার ৯০৮ হেক্টর ও শাকসবজি ১১ হাজার ২৯০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আদা, হলুদ, আখ, পান, মরিচ, তরমুজ, পেঁপে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, টমেটো ইত্যাদি ফসল এবং ফলবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বন্যা মোকাবিলায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বন্যাত্তোর পরিস্থিতিতে রোপণের জন্য আমন ধানের বীজ বিতরণ ও বীজতলা প্রস্তুত করা, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান এবং কমিটির মাধ্যমে পুরো কার্যক্রমকে সমন্বয় ও মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে পুনর্বাসন কর্মসূচি বাবদ ৯ জেলায় (কুমিল্লা, চাঁদপুর, বি- বাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি) রোপা আমন চাষের জন্য প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের তাৎক্ষণিকভাবে ১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে আমন ধানের ৪০০ মে.টন বীজ। ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার এবং নগদ ১০০০ টাকা উপকারভোগী কৃষক পরিবারকে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে চাষের আওতায় আসবে ১০ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমি রোপা আমন। এতে প্রায় ৮০ হাজার কৃষক উপকারভোগীর আওতায় আসবেন।

বন্যা কবলিত জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে ৬৪ জেলায় ১২টি ফসলে (গম, ভুট্টা, সরিষা, সুর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, পেঁয়াজ, মুগ, মসুর, খেসারি, ফেলন ও অড়হড়) রবি মৌসুমে প্রণোদনা/পুনর্বাসনের জন্য ১৬৪.৭৯ কোটি টাকা অর্থছাড় করা হয়েছে, যাতে ১৬.৪১ লাখ কৃষক উপকৃত হবেন। পরবর্তীতে শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদনে জন্য ২২.৮৪ কোটি টাকা ১.৫ লক্ষ কৃষককে প্রণোদনা প্রদানের জন্য অর্থছাড় করা হয়েছে।