শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার

কেবি ১৫ সেপ্টেম্বার ২০২৪ ০২:০২ পি.এম

চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের ২৬টি পাহাড়ে প্রায় ছয় হাজার ৫৫৮টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। এই ২৬টি পাহাড়ের মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ১৬টি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন রয়েছে ১০টি। এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। প্রতিবছর বর্ষাকালে এসব পাহাড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবু দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অনেকটাই নীরব।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, ২৬টি পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাস করছেন। এসব পাহাড়ের মধ্যে সাতটি রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রামের মালিকানাধীন। সেই পাহাড়গুলোর মধ্যে পলিটেকনিক হল্ট স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ১২টি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে পাঁচটি, ষোলোশহর স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৭৪টি, ফয়’স লেক এলাকার ১, ২, ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়ে চার হাজার ৪৭৬টি, মতিঝর্ণা ও বাটালী হিলসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩১টি, পরিবেশ অধিদপ্তরসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৬টি এবং লেকসিটি আবাসিক এলাকাসংলগ্ন বিজয় নগর পাহাড়ে ২৮৮টি পরিবার বসবাস করছে।

গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর মালিকানাধীন বাটালী হিল ও মতিঝর্ণা অংশের পাহাড়ে বাস করছে ৮৮টি পরিবার। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেটসংলগ্ন পাহাড় ও কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেটসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছে যথাক্রমে ৪৯ ও ১৪৬টি পরিবার। এছাড়া ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত তিন পাহাড়ের উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ১৫০ দাগের পাহাড়ে (জয়ন্তিকা আবাসিকসংলগ্ন) ২৮টি, বিএস ২১২ ও ২১৩ দাগের পাহাড়ে (মুরগি ফার্ম হয়ে গার্ডেন ভিউ সোসাইটিসংলগ্ন) ১২টি এবং আকবর শাহ বেলতলী পাহাড়ে ৮৯টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

অন্যদিকে এপিভুক্ত (পরিত্যক্ত সম্পত্তি) পলিটেকনিক কলেজসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩টি এবং ভিপিভুক্ত (অর্পিত সম্পত্তি) লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসাসংলগ্ন পাহাড়ে ৩২৩টি পরিবার বসবাস করছে। বাকি ১০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়ের মধ্যে হারুন খান সাহেবের পাহাড়ে ১৪৪টি, নাছিয়াঘোনা এলাকার পাহাড়ে ১২টি, চিড়িয়াখানার পেছনের পাহাড়ে ২৮টি, মধুশাহ পাহাড়ে ২৯টি, জালালাবাদসংলগ্ন পাহাড়ে পাঁচটি, নাগিন পাহাড়ে ২৫টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়ে ৩৮টি, এমআর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৪২টি, মিয়ার পাহাড়ে ৪৯টি এবং ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে (রৌফাবাদ, অক্সিজেন) ১১টি পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানমতে, চট্টগ্রাম নগরে ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে মারা যান ১২৭ জন। এর মধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝর্ণা এলাকায় মারা যান ১১ জন। ২০০৮ সালে ১২ জন, ২০১১ সালে ১৭ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১৩ সালে দুজন, ২০১৫ সালে পাঁচজন, ২০২২ সালে চারজন ও ২০২৩ সালে দুজন নিহত হন।

জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে রীতিমতো বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করেই দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ। পানির সংযোগও রয়েছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিটি সভায় সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা

বিভিন্ন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন করা হয় না। ফলে দিনের পর দিন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে শক্ত অবস্থান গাড়েন অবৈধ বাসিন্দারা। প্রতিবছর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে এসব বসতঘরে। প্রাণ হারানোর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় মাইকিং। ডাকা হয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা। এরপর পাহাড় থেকে সরিয়ে দেয়া হয় অবৈধ বসবাসকারীদের। কিন্তু বৃষ্টি থামলে আবার পাহাড়ে বসতি গাড়েন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০০৭ সালের ভয়াল ঘটনার পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব ছিল বিশেষজ্ঞ কমিটির দেয়া ৩৬ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পাহাড় কাটা বন্ধ করে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা। তবে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি কেবল বর্ষা মৌসুমে সভা করে দায় সারে। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে কিছু কাজও হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘ ঘুমে চলে যায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি! আর এই সুযোগে পাহাড়ে নতুন করে বসতি স্থাপন চলে। এসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের পরিষেবা দেন সরকারি তিন সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারাই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ঘুষের বিনিময়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেন। এই পাহাড়গুলোর বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে প্রশাসন চাইলেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরাতে পারে না।

এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে, সবগুলো ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া এসব সেবা সংস্থার প্রধানদের ১৫ দিন পরপর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানাতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

গাজীপুরে ঝুট গুদামে আগুন, ছড়িয়েছে বসতবাড়িতেও

news image

নারায়ণগঞ্জে গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী ঢামেকে ভর্তি

news image

একসঙ্গে দুই বোনের প্রাণ গেল পুকুরে

news image

এ মাসে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়-কালবৈশাখী, থাকবে তাপপ্রবাহ

news image

নাফ থেকে চার জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

news image

প্রতিবন্ধী সন্তানের যন্ত্রণা সইতে না পেরে...

news image

আনোয়ারায় পাহাড় ধসে ২ শিশু নিহত, গুরুতর আহত ২ শিশু

news image

কসবায় ৭০ লাখ টাকার ভারতীয় চশমা জব্দ

news image

মৎস্য আড়তে অভিযান ৭০ কেজি জাটকা জব্দ

news image

বুধবার বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

news image

ঝিনাইগাতীতে অবৈধ বালু পরিবহন: দুইজনের কারাদণ্ড, ৯টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস

news image

গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ তাসলিমা মারা গেলেন

news image

রাজধানীসহ দেশের ১৬ অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

বিজয়নগরে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ২০

news image

৫ জেলায় বজ্রপাতে ১০ জনের প্রাণহানি

news image

গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: দগ্ধ সীমার মৃত্যু, ৪ জন আশঙ্কাজনক

news image

গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৫

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কারাগারে থাকা হাজতির মৃত্যু

news image

বিএসএফের গুলিতে ঝিনাইদহ সীমান্তে একজন নিহত

news image

সোমবার থেকে তাপপ্রবাহ কমতে পারে

news image

এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় মোটর সাইকেল আরোহী নিহত

news image

আজও থাকবে তাপের উত্তাপ

news image

গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫

news image

নোয়াখালীতে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

news image

আখাউড়ায় বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী আহত

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭৮ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার এক

news image

ঈশ্বরদীতে চরের জমি নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে চারজন গুলিবিদ্ধ

news image

হবিগঞ্জে সমিতির দখল নিয়ে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

news image

দেশজুড়ে তাপপ্রবাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস

news image

লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সেমিনার অনুষ্ঠিত