মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার

কেবি ১৫ সেপ্টেম্বার ২০২৪ ০২:০২ পি.এম

চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে সাড়ে ছয় হাজার পরিবার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের ২৬টি পাহাড়ে প্রায় ছয় হাজার ৫৫৮টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। এই ২৬টি পাহাড়ের মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ১৬টি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন রয়েছে ১০টি। এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। প্রতিবছর বর্ষাকালে এসব পাহাড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবু দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অনেকটাই নীরব।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে, ২৬টি পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাস করছেন। এসব পাহাড়ের মধ্যে সাতটি রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রামের মালিকানাধীন। সেই পাহাড়গুলোর মধ্যে পলিটেকনিক হল্ট স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ১২টি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে পাঁচটি, ষোলোশহর স্টেশনসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে ৭৪টি, ফয়’স লেক এলাকার ১, ২, ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়ে চার হাজার ৪৭৬টি, মতিঝর্ণা ও বাটালী হিলসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩১টি, পরিবেশ অধিদপ্তরসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৬টি এবং লেকসিটি আবাসিক এলাকাসংলগ্ন বিজয় নগর পাহাড়ে ২৮৮টি পরিবার বসবাস করছে।

গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর মালিকানাধীন বাটালী হিল ও মতিঝর্ণা অংশের পাহাড়ে বাস করছে ৮৮টি পরিবার। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ফিরোজ শাহ হাউজিং এস্টেটসংলগ্ন পাহাড় ও কৈবল্যধাম হাউজিং এস্টেটসংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছে যথাক্রমে ৪৯ ও ১৪৬টি পরিবার। এছাড়া ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত তিন পাহাড়ের উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ১৫০ দাগের পাহাড়ে (জয়ন্তিকা আবাসিকসংলগ্ন) ২৮টি, বিএস ২১২ ও ২১৩ দাগের পাহাড়ে (মুরগি ফার্ম হয়ে গার্ডেন ভিউ সোসাইটিসংলগ্ন) ১২টি এবং আকবর শাহ বেলতলী পাহাড়ে ৮৯টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।

অন্যদিকে এপিভুক্ত (পরিত্যক্ত সম্পত্তি) পলিটেকনিক কলেজসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩টি এবং ভিপিভুক্ত (অর্পিত সম্পত্তি) লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসাসংলগ্ন পাহাড়ে ৩২৩টি পরিবার বসবাস করছে। বাকি ১০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়ের মধ্যে হারুন খান সাহেবের পাহাড়ে ১৪৪টি, নাছিয়াঘোনা এলাকার পাহাড়ে ১২টি, চিড়িয়াখানার পেছনের পাহাড়ে ২৮টি, মধুশাহ পাহাড়ে ২৯টি, জালালাবাদসংলগ্ন পাহাড়ে পাঁচটি, নাগিন পাহাড়ে ২৫টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়ে ৩৮টি, এমআর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৪২টি, মিয়ার পাহাড়ে ৪৯টি এবং ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে (রৌফাবাদ, অক্সিজেন) ১১টি পরিবারের সদস্যরা ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যানমতে, চট্টগ্রাম নগরে ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে মারা যান ১২৭ জন। এর মধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝর্ণা এলাকায় মারা যান ১১ জন। ২০০৮ সালে ১২ জন, ২০১১ সালে ১৭ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১৩ সালে দুজন, ২০১৫ সালে পাঁচজন, ২০২২ সালে চারজন ও ২০২৩ সালে দুজন নিহত হন।

জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে রীতিমতো বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করেই দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ। পানির সংযোগও রয়েছে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিটি সভায় সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা

বিভিন্ন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন করা হয় না। ফলে দিনের পর দিন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে শক্ত অবস্থান গাড়েন অবৈধ বাসিন্দারা। প্রতিবছর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে এসব বসতঘরে। প্রাণ হারানোর পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শুরু হয় মাইকিং। ডাকা হয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা। এরপর পাহাড় থেকে সরিয়ে দেয়া হয় অবৈধ বসবাসকারীদের। কিন্তু বৃষ্টি থামলে আবার পাহাড়ে বসতি গাড়েন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০০৭ সালের ভয়াল ঘটনার পর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব ছিল বিশেষজ্ঞ কমিটির দেয়া ৩৬ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পাহাড় কাটা বন্ধ করে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা। তবে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি কেবল বর্ষা মৌসুমে সভা করে দায় সারে। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উচ্ছেদ এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে কিছু কাজও হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘ ঘুমে চলে যায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি! আর এই সুযোগে পাহাড়ে নতুন করে বসতি স্থাপন চলে। এসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের পরিষেবা দেন সরকারি তিন সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারাই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ঘুষের বিনিময়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেন। এই পাহাড়গুলোর বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে প্রশাসন চাইলেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরাতে পারে না।

এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের যেসব অবৈধ সংযোগ রয়েছে, সবগুলো ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া এসব সেবা সংস্থার প্রধানদের ১৫ দিন পরপর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানাতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

নুরুল হুদাকে ধরার সময় যে মব জাস্টিস হয়েছে তা কাম্য নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

অষ্টগ্রামে যৌথ অভিযানে মাদকসহ কারবারি আটক

news image

ময়মনসিংহের দুই সড়কে ঝরল ১০ প্রাণ

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ

news image

৮ অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে সন্ধ্যার মধ্যে

news image

মিঠামইনে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব

news image

এ যেন এক নির্মম নিয়তি!

news image

৫ রাজাকারকে কোপানো সেই মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের মৃত্যু

news image

ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড 

news image

অর্ধেকে নেমেছে চামড়ার দাম, বিপাকে কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

news image

সন্ধ্যার মধ্যে ১৩ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

২৫ বছর পর অক্ষত লাশ মিললো কুড়িগ্রামে

news image

আশুগঞ্জে সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে তলিয়ে গেছে পাথরবাহী বাল্কহেড

news image

বিজয়নগরে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার, সিএনজি জব্দ

news image

নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার হলো বান্দরবানে

news image

হাওরের সৌন্দর্যে পর্যটকের পদভারে মুখর কিশোরগঞ্জ

news image

শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ সমু চৌধুরী, রয়েছেন মাজারেই

news image

প্রথম দিনেই এক ট্রলারে উঠে এলো ৪৩ মণ ইলিশ

news image

কসবায় ঈদ পুনর্মিলনীতে বিএনপির ঐক্যের মহামিলন

news image

চার ঘণ্টার মুক্তি পেয়ে মাকে শেষ বিদায় সাংবাদিক রুপার

news image

বরগুনায় ডেঙ্গুতে একদিনে ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৭২ জন

news image

আড়াইহাজার ও কুমিল্লায় পুকুরে ডুবে ৪ কন্যাশিশুর মৃত্যু

news image

বিজয়নগরে ১৫৭ বোতল সিরাপসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

news image

চাঁদপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনীতে হামলায় ৬ জন আহত

news image

সৈয়দপুরে প্রখর তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন

news image

চট্টগ্রামে আরও একজনের করোনা শনাক্ত

news image

কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত

news image

বউ আনতে গিয়ে মাংস বিড়ম্বনায় বর খেলেন বেদম মার

news image

সিলেটে রিকশায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেলো নারী চিকিৎসকের

news image

স্ত্রীকে স্মরণ করে কাঁদলেন কাদের সিদ্দিকী