মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

রণাঙ্গণের সাহসীযোদ্ধা রশিদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান

কেবি ২৫ ডিসেম্বার ২০২৪ ০৩:৫১ পি.এম

রণাঙ্গণের সাহসীযোদ্ধা রশিদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান সাহসীযোদ্ধা আব্দুর রশিদ

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : কাঠমিস্ত্রি আব্দুর রশিদ। ১৯৭১সালে ছিলেন টকবকে যুবক। মাতৃভূমিকে ভালোবেসে দেশের স্বধীনতার জন্য জীবন বাঁজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার পর রণাঙ্গণের সহযোদ্ধা শহীদ আবু খাঁর মা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করায় অভিমান করেই স্বীকৃতি চাননি আব্দুর রশিদ। কিন্তু জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে ভাতা নয়, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান এই রণাঙ্গণের যোদ্ধা।

আব্দুর রশিদের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত হাফিজ উদ্দিন এবং মাতার নাম মৃত শহরের নেছা। পেশায় কাঠমিস্ত্রি হলেও গ্রামবাসী তাকে একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে চেনে। বাঘবেড় গ্রামে গিয়ে কথা হয় আব্দুর রশিদের সাথে। আলাপচারিতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে রণাঙ্গণের নানা ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।

আব্দুর রশিদ বলেন ‘১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ শহরে আনসারের (সশস্ত্র) প্রশিক্ষণ নেই। ৭মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেয়ার পর আনসার শিবিরে গুঞ্জন শুরু হয় যেকোনো মূহুর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে ডাক আসতে পারে তাই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

১৯৭১ সারের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী নির্বিচার গণহত্যা শুরু করলে পরের দিন আমাদের গ্রামে খবর পৌছে। এরপর আমরা আনসাররা ময়মনসিংহে জড়ো হই। পাকবাহিনী ট্রেনযোগে ময়মনসিংহ না আসতে পারে সেজন্য জেলা আনসার অফিসার মালেক সাহেব আমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে প্রত্যেককে অস্ত্র ও গুলি  দিয়ে কেওয়াটখালী এলাকায় রেলপথে পাহাড়ায় পাঠান। কয়েকদিন পর সেখান থেকে আমার ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে যাওয়ার পথে পাকবাহিনী বিমান হামলা করলে ছত্রভঙ্গ হয়ে অস্ত্র নিয়ে গৌরীপুর বাড়িতে আসি। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে প্রশিক্ষণ নিতে উচাখিলা এলাকার এক সেনা সদস্যর সাথে অস্ত্র নিয়ে নেত্রকোনার রংরা বর্ডার দিয়ে ভারত প্রবেশ করি’।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কোম্পানী কমা-ার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে নেত্রকোনার কলমাকান্দা,  নাজিরপুর, বাইশদার, বড়াইল, নেত্রকোনা বিজয় সহ বিভিন্ন যুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন আব্দুর রশিদ।

ভারত প্রবেশের পর ইয়ুথ ক্যাম্পে ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহানের দেখা হলে রশিদ সেখানে থেকে যান। পরের দিন নাজমুল হক তারার কোম্পানি তুরা ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে আসার খবর পেয়ে  ক্যাপ্টেন চৌহানের অনুমতিতে তাদের দলে ঢুকে পড়েন রশিদ। এরপর বাংলাদেশে প্রবেশ করে নেত্রকোনারা ঠাকুরাকোনা ব্রীজ ধ্বংস করেন।

নেত্রকোনার নাজিরপুর যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্দুর রশিদ বলেন, নাজিরপুর বাজারে একটি কাচারীতে পাঞ্জাবিদের ক্যাম্প ছিলো। আমাদের কোম্পানী কমা-ার তারা ভাই পরিকল্পনায় ওই ক্যাম্প আগুন দিয়ে পুড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এসময় কংশ নদীর হয়ে পাঞ্জাবিরা অতর্কিতে আক্রমণ করলে ডা. আজিজ, ফজলুল হক, ইয়ার মাহমুদ সহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে কমা-ার তারা ভাই মারাত্মকভাবে আহত হন।

নেত্রকোনা শহর বিজয় করতে ১৯৭১ সালের ৮ই ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহান ও তারা কোম্পানির আবু সিদ্দিক ও খসরু ভাইয়ের নেতৃত্বে ভোররাতে পাকবাহিনীকে লক্ষ্য করে মর্টার শেল নিক্ষেপ করলে মোক্তার পাড়া  ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। আমি আর আবু খা ব্রিজের দক্ষিণ পাড় থেকে পাকবাহিনীকে লক্ষ করে গুলি ছুড়ছিলাম। এসময় পাকবাহিনীর একটি বুলেট আবু খা বুকে আঘাত হানলে সে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এছাড়াও ওই যুদ্ধে আব্দুর রশিদ ও আব্দুস সাত্তার শহীদ হন। গুরুতর আহত হয় সিদ্দিক ভাই।

কথা প্রসঙ্গে রশিদ জানান, স্বাধীনতার পর শহীদ আবু খাঁর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি টাকার অভাবে তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা হচ্ছেনা। এরপর আমি বাড়ি এসে কিছু টাকা সংগ্রহ করে কয়েকদিন পর ওই বাড়িতে গিয়ে আবু খাঁর বোনের হাতে টাকা দিয়ে বলি মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। তখন তার বোন কাঁদতে কাঁদতে কবর দেখিয়ে বলেন মা আর বেঁচে নেই। স্বাধীন দেশে শহীদের মা বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো সেই কষ্টে স্বীকৃতি চাইনি। এখন বয়স হয়ে গেছে। তাই মৃত্যুর আগে সকারের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নামের স্বীকৃতিটা দেখে যেতে চাই। আমার কোনো ভাতার দরকার নেই।

নেত্রকোনা সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাম-ার আইয়ুব আলী বলেন, আমাদের কোম্পানি যখন ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে আসছিলো তখন ভারতীয় আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহান অস্ত্রসহ রশিদ ভাইকে আমাদের দলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর রশিদ ভাই আমাদের সাথে থেকে নেত্রকোনা অঞ্চলের সবগুলো যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই রশিদ ভাই একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাকে যেনো দ্রুত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় সকল সম্মাণ ও সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। 

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

নুরুল হুদাকে ধরার সময় যে মব জাস্টিস হয়েছে তা কাম্য নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

অষ্টগ্রামে যৌথ অভিযানে মাদকসহ কারবারি আটক

news image

ময়মনসিংহের দুই সড়কে ঝরল ১০ প্রাণ

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ

news image

৮ অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে সন্ধ্যার মধ্যে

news image

মিঠামইনে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব

news image

এ যেন এক নির্মম নিয়তি!

news image

৫ রাজাকারকে কোপানো সেই মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের মৃত্যু

news image

ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড 

news image

অর্ধেকে নেমেছে চামড়ার দাম, বিপাকে কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

news image

সন্ধ্যার মধ্যে ১৩ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

২৫ বছর পর অক্ষত লাশ মিললো কুড়িগ্রামে

news image

আশুগঞ্জে সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে তলিয়ে গেছে পাথরবাহী বাল্কহেড

news image

বিজয়নগরে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার, সিএনজি জব্দ

news image

নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার হলো বান্দরবানে

news image

হাওরের সৌন্দর্যে পর্যটকের পদভারে মুখর কিশোরগঞ্জ

news image

শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ সমু চৌধুরী, রয়েছেন মাজারেই

news image

প্রথম দিনেই এক ট্রলারে উঠে এলো ৪৩ মণ ইলিশ

news image

কসবায় ঈদ পুনর্মিলনীতে বিএনপির ঐক্যের মহামিলন

news image

চার ঘণ্টার মুক্তি পেয়ে মাকে শেষ বিদায় সাংবাদিক রুপার

news image

বরগুনায় ডেঙ্গুতে একদিনে ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৭২ জন

news image

আড়াইহাজার ও কুমিল্লায় পুকুরে ডুবে ৪ কন্যাশিশুর মৃত্যু

news image

বিজয়নগরে ১৫৭ বোতল সিরাপসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

news image

চাঁদপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনীতে হামলায় ৬ জন আহত

news image

সৈয়দপুরে প্রখর তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন

news image

চট্টগ্রামে আরও একজনের করোনা শনাক্ত

news image

কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত

news image

বউ আনতে গিয়ে মাংস বিড়ম্বনায় বর খেলেন বেদম মার

news image

সিলেটে রিকশায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেলো নারী চিকিৎসকের

news image

স্ত্রীকে স্মরণ করে কাঁদলেন কাদের সিদ্দিকী