ফেসবুকে মানবতার ফেরিওয়ালা, আসলে একজন ভয়ংকর প্রতারক

এনএস ডেস্ক : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) একটি তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে, যেখানে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ডিবির পরিদর্শক আতাউর রহমান জানান, মিল্টন মাত্র ২০ হাজার টাকায় একটি শিশুকে বিক্রি করেছিলেন। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

মানবতার মুখোশের আড়ালে ভয়ঙ্কর অপরাধ,

তদন্তে জানা গেছে, ডাক্তার না হয়েও মিল্টন নিজেই আশ্রমের রোগীদের অস্ত্রোপচার করতেন। প্রয়োজন হলে নিজেই হাত-পা কেটে ফেলতেন। ফেসবুকে ৯০০ জনের লাশ দাফনের দাবি করলেও, প্রকৃতপক্ষে দাফন করেছেন মাত্র ১৫০ জনের মরদেহ। তার বিরুদ্ধে ভুয়া মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে।

ডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিল্টন ফেসবুকে এক কোটি ৬০ লাখ অনুসারীর সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তার ১৪টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।

অত্যাচার ও প্রতারণার দীর্ঘ ইতিহাস,

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই জালিয়াতিতে যুক্ত ছিলেন মিল্টন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে সার্টিফিকেট তৈরি করায় স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। এমনকি পারিবারিক বিরোধের সময় নিজের বাবাকেও আঘাত করেন তিনি। পরে ঢাকায় এসে ওষুধ ব্যবসা ও নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৬ সালে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন।

২০১৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন নিলেও কোনো পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেননি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে চার্চ কমিটিতে স্থান পাওয়ার চেষ্টা করেন।

নির্যাতন ও অপারেশনের নামে বিভীষিকা,

মিল্টন রাস্তা থেকে অসহায় বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের তুলে এনে আশ্রমে রাখতেন। সেখানে নিজেই তাদের চিকিৎসা করতেন এবং ডাক্তারদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া চিকিৎসা বোর্ড লাগাতেন। ব্লেড ও ছুরি দিয়ে শরীর কাটাছেঁড়া করতেন, কখনো কখনো নিজেই হাত-পা বিচ্ছিন্ন করতেন।

ডিবির চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আশ্রমে থাকা অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো। অনেককে ইচ্ছাকৃতভাবে আহত করা হতো, যাতে তাদের চিকিৎসার নামে দান সংগ্রহ করা যায়।

জামিনে মুক্ত হয়ে প্রতারণার ধারাবাহিকতা,

একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়েও মিল্টন জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় ফেসবুকে সক্রিয় হয়েছেন। নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করে তিনি মানবতার নামে অনুদান চাইছেন, যা তার অপরাধমূলক কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি কৌশল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

এই ঘটনা আমাদের সমাজের অন্ধকার দিকগুলোর একটি প্রতিচিত্র তুলে ধরে, যেখানে মানবতার নামে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে