সোমবার ২৩ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
সারাদেশ

উৎপাদন বাড়লেও বদলায়নি চা শ্রমিকের জীবন

নিউজ ডেক্স ০৬ মে ২০২৪ ০৫:৪৭ পি.এম

সংগৃহীত

চা! চা একটি মারাত্মক নেশা। চা খায় না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। দিন দিন বাড়ছে চায়ের উৎপাদন। কিন্তু দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও শ্রমিকদের দারিদ্রতা ছেড়ে যায়নি।

প্রকৃতির সবুজ চাদরে মোড়ানো চা বাগান শুধু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী নয়। প্রায় ২০০ বছর ধরে সেখানে বসবাসরত চা শ্রমিকদের ঘামে ও শ্রমে প্রতি বছর চা উৎপাদন হচ্ছে তবুও এখনও অর্থের অভাবে মানবেতর দিন পার করছে মৌলভীবাজারে ৯৭টি চা বাগানে কাজ করা ৯০ হাজার শ্রমিক।

প্রতি বছর ১ মে দিবস পালিত হয়ে আসছে, প্রতি বছর মে দিবস আসে আবার চলে যায়। কিন্তু তাদের অধিকার, নিজস্ব ভূমি থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার মান আজও বদলায়নি। চা শ্রমিকরা আজও তাদের ন্যায্য দাবি দাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

চা শিল্প ও বস্তি এলাকার বেকার নারী শ্রমিকরা বৈষম্যমূলক মজুরিতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। মে দিবসকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা বিনোদন আর ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের অধিকার থাকলেও জীবন আর জীবিকার তাগিদে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নারী-পুরুষ ও বেকার শ্রমিকরা মে দিবসে অর্জিত অধিকার থেকে বঞ্চিত।

 যাদের শ্রমে অর্জিত হচ্ছে হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা, তাদের অবহেলিত না রেখে অধিকার বাস্তবায়ন করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা চা শ্রমিক নেতাদের। চা শ্রমিকদের প্রতি সদয় আচরণ ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের দায়িত্ব।

মৌলভীবাজার শ্রম অধিদপ্তর শ্রম অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, চা দেশের অন্যতম রপ্তানীমুখী একটি শিল্প। সেই শিল্পে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন দেশের মোট ১৬৩টি চা বাগানের লক্ষাধিক চা শ্রমিক। আর সেই চা বাগানের মধ্যে ৯২টি বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। 
এদিকে বছরের পর বছর ধরে এসব চা বাগানে কর্মরত লক্ষাধিক চা শ্রমিক দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও এখনো তাদের বেতন বৈষম্যসহ নানা বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। সারা দেশে কর্মরত চা শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৯২টি চা বাগান মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার নিয়মিত চা শ্রমিক কাজ করেন এই জেলায়। তাদের সিংহ ভাগই নারী।

জানা যায়, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাগানে যারা কাজ করেন তাদের অধিকাংশই নারী শ্রমিক। প্রতিবছর মে দিবস আসে আবার চলে যায়। কিন্তু তাদের নিজস্ব ভূমি থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার কোনো বদল আজও হয়নি। এখনো অনেক শ্রমিককে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে চা পাতা তুলে, সেই খরচ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর পুরুষ শ্রমিকদের অধিকাংশই বেকার। আর যারা নিয়মিত কাজ করছেন তারা কোম্পানি থেকে যা পান সেটা দিয়ে সংসার চলে না। এ নিয়ে তাদের অভিযোগের শেষ নেই। মৌলিক চাহিদা পূরণে দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধি, ভূমি অধিকার, বাসস্থান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবি তাদের। 

কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন চা শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের শ্রম দিয়ে চা বাগান আগলে রাখলেও তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা এখনো অবহেলিত। সরকার তাদের আবাসস্থল নিজ নিজ মালিকানায় করে দিবে বললেও এখনো সে উদ্যোগের কোনো অগ্রগতি নেই।

নারী শ্রমিক পারভীন বেগম ও শেফালি কর বলেন, পেটের দায়ে যখন যে কাজ পাই সেটা করতে আমরা বাধ্য হই। তারপরও দেড়শ কিংবা দুইশ টাকা রোজ দেওয়া হয়। এটি দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। আর পুরুষরা কাজ করলেই তিন থেকে চারশ টাকা পান। আমরাও পুরুষদের চেয়ে কাজ কম করি না। তবে পারিশ্রমিক কম পাই।

তারা জানান, প্রতি বছর চা বাগানের অনেক মানুষ নিয়ে আমরা মে দিবস পালন করি। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা সবার কাছে তুলে ধরি। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলন কে শুনবে, কী হবে আর মে দিবস পালন করে।

শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের মনি গোয়ালা, লছমী রাজভর, আলীনগর চা বাগানের রেবতি রিকিয়াশনসহ নারী শ্রমিকরাও জানান, তারা ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা সেরে কাজে বের হন আর সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে রান্নাবান্না করেন। এটি চা বাগানের বেকার নারীদের প্রতিদিনের চিত্র। এভাবেই চলছে তাদের জীবন সংগ্রাম। বস্তির অতি দরিদ্র ও চা শিল্পে শ্রমজীবীদের একটি বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে বেকার। চা বাগানের নারীদের কাছ থেকে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়।

তারা বলেন, বর্তমান শ্রমিকবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি, এই অবহেলিত চা শ্রমিকদের বাসস্থানের জায়গাটুকু যাতে তাদের নিজের নামে করে দেওয়া হয়। যাতে বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের যখন তখন ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে না পারে।

শ্রীমঙ্গলে বালিশিরা ভ্যারি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হলো চাকরির কোটা, শিক্ষা কৌটা, বাসস্থান, ভূমি এই মৌলিক অধিকার যেগুলো রয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে যাতে এগুলো পূরণ করা হয়। এই দেশে আমরা মানুষ হিসেবে আছি চা বাগানের চা শ্রমিকরা পিছিয়ে পড়া জাতি। এবং অনেক পিছনে রয়েছি এই দেশের সঙ্গে তাল মিলাতে হলে আমাদের কাছে সরকারকে আসতে হবে, চা শ্রমিকদের কথা বলতে হবে চা বাগানের মানিকদের।

তিনি বলেন, চুক্তিতে বলা আছে মিতিংকা টাইপের ঘর দেওয়ার কথা, আসলে সেই টাইপের ঘর দেওয়া হয়নি। সেই পাকিস্তান আমলের ঘরগুলো আছে, ঘরগুলো দেখবেন কাগজ দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে যাওয়ার অবস্থা।

শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টি ভাড়াউড়া ডিভিশন জেনারেল ম্যানাজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, অকশনে চায়ের দাম বৃদ্ধি না পাওয়াতে ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকরা। অনেক মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমনটা বজায় থাকলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে চা বাগান।

মৌলভীবাজার শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, তবুও তাদের দাবি-দাওয়াসহ নানা বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। চা শ্রমিকদের আবাসনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় বিবেচনায় আছে। তা ছাড়া ইতোমধ্যে ২৬৫ জন চা শ্রমিকের প্রত্যেককে সরকারিভাবে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর দেওয়া হয়েছে। ৩৫ হাজার শ্রমিককে প্রতি বছর ৫ হাজার টাকা করে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি তারা গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।

২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়। গত বছর দেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা–চাষিদের হাত ধরে উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলক চা চাষ শুরুর পর ১৮৪ বছরের ইতিহাসে গত বছর প্রথমবারের মতো চা উৎপাদন ১০ কোটি কেজি ছাড়ায়। এর আগে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল ২০২১ সালে।

সে বছর দেশের সব বাগান মিলিয়ে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি চায়ের উৎপাদন হল, এখন সেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ডে দাঁড়ায়। তৃতীয় সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর চা উৎপাদিত হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

নুরুল হুদাকে ধরার সময় যে মব জাস্টিস হয়েছে তা কাম্য নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

অষ্টগ্রামে যৌথ অভিযানে মাদকসহ কারবারি আটক

news image

ময়মনসিংহের দুই সড়কে ঝরল ১০ প্রাণ

news image

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ

news image

৮ অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টি হতে পারে সন্ধ্যার মধ্যে

news image

মিঠামইনে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব

news image

এ যেন এক নির্মম নিয়তি!

news image

৫ রাজাকারকে কোপানো সেই মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের মৃত্যু

news image

ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড 

news image

অর্ধেকে নেমেছে চামড়ার দাম, বিপাকে কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

news image

সন্ধ্যার মধ্যে ১৩ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস

news image

২৫ বছর পর অক্ষত লাশ মিললো কুড়িগ্রামে

news image

আশুগঞ্জে সেতুর পিলারে ধাক্কা লেগে তলিয়ে গেছে পাথরবাহী বাল্কহেড

news image

বিজয়নগরে মাদক কারবারি গ্রেপ্তার, সিএনজি জব্দ

news image

নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার হলো বান্দরবানে

news image

হাওরের সৌন্দর্যে পর্যটকের পদভারে মুখর কিশোরগঞ্জ

news image

শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ সমু চৌধুরী, রয়েছেন মাজারেই

news image

প্রথম দিনেই এক ট্রলারে উঠে এলো ৪৩ মণ ইলিশ

news image

কসবায় ঈদ পুনর্মিলনীতে বিএনপির ঐক্যের মহামিলন

news image

চার ঘণ্টার মুক্তি পেয়ে মাকে শেষ বিদায় সাংবাদিক রুপার

news image

বরগুনায় ডেঙ্গুতে একদিনে ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৭২ জন

news image

আড়াইহাজার ও কুমিল্লায় পুকুরে ডুবে ৪ কন্যাশিশুর মৃত্যু

news image

বিজয়নগরে ১৫৭ বোতল সিরাপসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

news image

চাঁদপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনীতে হামলায় ৬ জন আহত

news image

সৈয়দপুরে প্রখর তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন

news image

চট্টগ্রামে আরও একজনের করোনা শনাক্ত

news image

কুষ্টিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত

news image

বউ আনতে গিয়ে মাংস বিড়ম্বনায় বর খেলেন বেদম মার

news image

সিলেটে রিকশায় ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেলো নারী চিকিৎসকের

news image

স্ত্রীকে স্মরণ করে কাঁদলেন কাদের সিদ্দিকী