শনিবার ০৩ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ব্যাংকে নগদ অর্থের প্রবল সঙ্কট বাড়ছে

নিউজ ডেক্স ২৭ মে ২০২৪ ০৩:৫৫ পি.এম

সংগৃহীত

দিন দিন ব্যাংকে প্রবলভাবে বাড়ছে নগদ অর্থের সঙ্কট । কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে টাকার সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। এক দিনে ২৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

পাশাপাশি ব্যাংকগুলো সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিয়েছে । সব মিলে এক দিনে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকের এ ধরনের সমস্যা বারবার দেখা দিচ্ছে। তারল্য সঙ্কটের কারণ ও তা শুধরানোর ব্যবস্থা না করে এভাবে টাকার জোগান দিতে থাকলে ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। 

বরং তারা এতে সাময়িকভাবে সমস্যা কাটলেও ভবিষ্যতে বড় বিপদ আসার আশঙ্কা করছেন । তাদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে রোগ দেখা দিয়েছে, তার সঠিক প্রতিকারমূলক কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত বলে তারা মনে করছেন।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কাক্সিক্ষত হারে নগদ টাকা আদায় হচ্ছে না। যারা ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়েছেন, তারা টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এভাবে দিনের পর দিন টাকা ফেরত না দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন তারা। আবার প্রয়োজনীয় আমানতও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই নগদ টাকার প্রয়োজন হচ্ছে। আবার প্রতি ১৫ দিন অন্তে ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলকভাবে নগদ জমা (সিআরআর) সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। 

এক দিকে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো, অন্য দিকে সিআরআর সংরক্ষণ, সব মিলেই নগদ টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোর নাভিশ্বাস অবস্থা দেখা দিয়েছে। আন্তঃব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে এসব ব্যাংককে।

বৃহস্পতিবার (২৩মে) বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন মেয়াদে ২৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হয়েছে পৌনে ৯ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আমরা শুনতে পেয়েছি বিশেষ কিছু ব্যাংকের নগদ টাকার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তারা গ্রাহকের অর্থ ঠিকমতো ফেরত দিতে পারছে না। গ্রাহকরা যেন আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রেপো ও বিশেষ রেপোর মাধমে তারল্য সহায়তা দিয়ে আসছে।

তিনি মনে করেন, এতে দুই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। প্রথমত, যারা টাকা নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছেন না তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে অন্যদের মধ্যেও টাকা ফেরত না দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কারণ তারা দেখছেন টাকা ফেরত না দিয়ে পার পাওয়া যায়। উপরন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদেরকে তারল্য সহায়তাও দেয়া হয়। এতে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না।

অন্য দিকে কিছু ব্যাংকের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তার কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কর্মসূচি হাতে না নিয়ে বরং তারল্য সহায়তা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হলে এতে সাময়িক সমস্যা কাটলেও, তবে দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট বেড়ে যাবে।

তিনি মনে করেন, বর্তমান ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কটের কারণ বের করে তার শুধরানোর কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। অন্যথায় যেভাবে তারল্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা চালিয়ে গেলে আরো বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ২৬ হাজার ৩৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ধার দিয়েছে। এর মধ্যে চারটি ব্যাংক এক দিন মেয়াদি ১২টি দরপত্রের মাধ্যমে ৯৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ২৫টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭দিন মেয়াদি রেপোর মাধ্যমে ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, একটি ব্যাংক ২৮ দিন মেয়াদি রেপোর মাধ্যমে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ১৪টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক ১ দিন মেয়াদি তারল্য সহায়তার আওতায় সাত হাজার ৫৩৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা, পাঁচটি ব্যাংককে ২৮ দিন মেয়াদি ইসলামী ব্যাংক তারল্য সহায়তার আওতায় চার হাজার ৭২৫ কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিয়েছে ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘ দিন ধরেই তারল্য সঙ্কট চলছে। আর এ কারণে নগদ টাকার সঙ্কটে থাকা বেশির ভাগ ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে আবার আগের দেনা পরিশোধ করছে। আবার কেউ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে।

তবে, কিছু ব্যাংক প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। কলমানি মার্কেট থেকে তারা ধার করতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নির্ভশীল হয়ে পড়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর সহায়তা তুলে দিলে মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। আর এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তার তারল্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। তাদের মতে, বাজারে পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা পর্যন্ত তারল্য সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

একই সাথে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় তারল্য সঙ্কট কাটবে না, বরং দিন দিন তা বেড়ে যেতে পারে বলে তারা মনে করছেন।


নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

খালেদা জিয়াকে ৪-৫ মে দেশে আনার প্রস্তুতি

news image

নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে শ্রমিকদের অবস্থা বদলাতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

news image

পুরোনো যানবাহন অপসারণের ঘোষণা বিআরটিএ'র

news image

আওয়ামী লীগ নেতা মায়া চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

news image

বাংলাদেশের জিআই পণ্য এখন ৫৫টি

news image

উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ!

news image

দলগুলোর সমর্থন না পেলে সব উদ্যোগ নিষ্ফল হবে : সিইসি

news image

ঢাকার ৫০ জায়গায় 'এয়ার পিউরিফায়ার', লক্ষ্য বায়ুদূষণ রোধ

news image

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন

news image

মার্চ মাসে দেশে ১৬৩ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার

news image

এবার ভিন্নধর্মী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি'র তিন সংগঠন

news image

মে মাসেই শুরু হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচার: আল জাজিরাকে ড. ইউনূস

news image

রোম থেকে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

news image

আন্দোলনের মুখে স্থগিত ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা

news image

এবার সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে বগুড়া

news image

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে ইসির গেজেট

news image

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

বিএনপি কর্মী হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের নামে মামলা

news image

লোডশেডিং হচ্ছে ও হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

news image

কবি দাউদ হায়দারের চিরবিদায়

news image

রোমে বাংলাদেশ হাউস পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

news image

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ

news image

বিসিএস প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বন্ধ হচ্ছে বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপানো

news image

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর স্থগিত

news image

তদন্ত ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা যাবে সরকারি কর্মচারীদের 

news image

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের আল্টিমেটাম, এনসিপি নেতাদের সমালোচনা

news image

সংস্কারের দিকে তাকিয়ে থাকবে না নির্বাচন কমিশন: সিইসি

news image

অনেক বাড়ির মালিকও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড নিয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

news image

শিরীন-পলকসহ ১২ জন ৫ আগস্ট সংসদ ভবনে পালিয়ে ছিলেন

news image

হেফাজত নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: আসিফ নজরুল