মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ব্যাংক খাত সংস্কারে পরামর্শ উপেক্ষিত অর্থনীতিবিদদের

নিউজ ডেক্স ০৩ জুন ২০২৪ ০৫:১৭ পি.এম

সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুশাসন ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন । সেসময় কোনো সাড়া না দিলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

গত বছরের ২১ জুন জাতীয় সংসদে নতুন আইন “ব্যাংক কোম্পানি ‘সংশোধন’ বিল ২০২৩” পাস হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু নির্দেশনা জারি করে। তবে ব্যাংক সংস্কারে অর্থনীতিবিদরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন নতুন আইনে তার প্রতিফলন ঘটেনি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপেও সেসব পরামর্শ উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুশাসনের ঘাটতি এবং নীতিগত দুর্বলতার কারণে দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি হয়ে পড়া ও পরিচালনাগত অদক্ষতার কারণে ব্যাংকগুলো আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে একরকম গোষ্ঠীতন্ত্র (অলিগার্কি) তৈরি হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেও সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকের মালিক, রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা প্রভাব বিস্তার করছে, যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নাই। ফলে একদিকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যদিও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) হিসাবে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃতপশিল, আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও অবলোপন করা ঋণ বাদ দিয়ে খেলাপির পরিমাণ হিসাব করে।

এদিকে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক সিদ্ধান্ত আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করছে। ফলে তারা ব্যাংকে রাখা আমানত তুলে নিচ্ছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক ব্যাংক এখন ধার করে চলছে। গত কয়েক দিনের তথ্যে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২৫টি ব্যাংক এবং ৫ থেকে ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার করছে। অন্যদিকে চলতি হিসাব ঋণাত্মক থাকার পরও শরীয়াভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় ধার দিচ্ছে।

তীব্র হয়ে ওঠা তারল্য সংকট কাটাতে আবারও ব্যাংক খাত সংস্কারের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘তারল্য সংকট কাটাতে কী করা যায়—তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক কোম্পানি আইনে মোটা দাগে তিনটি বড় পরিবর্তন করা হয়েছে, যার একটিও প্রকৃতপক্ষে আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। এর পাশাপাশি ব্যাংক পরিচালনায় সুশাসনও নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রথমত, অর্থনীতিবিদরা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকে পরিবারতন্ত্র থেকে বের করার পরামর্শ দিয়েছিলেন; কিন্তু নতুন আইনে এক পরিবারের চারজনকে পরিচালক হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যদিও সর্বশেষ এই সংখ্যা একজন কমিয়ে ৩ করা হয়েছে। অথচ আগে এক পরিবার থেকে এক সঙ্গে দুজনের বেশি পরিচালক হতে পারতেন না। শুধু তাই নয়, তারা এখন অব্যাহতভাবে ১২ বছর পরিচালক থাকতে পারবেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে পরিবারতন্ত্র বা পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানো হয়েছে। এতে একই পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে ইচ্ছামতো ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে সেখানে একনায়কতন্ত্র তৈরি হবে।’

অন্যদিকে সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ বা আর্থিক সুবিধা বা তার ওপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করেন, তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবেন। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের কোনো সদস্যের নামে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলে সেটিও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। এক উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করলে সেটিই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলে গণ্য হবে।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিকাংশ আইনই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের পক্ষে রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইনে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঋণ ছাড় করার পর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করা হবে; কিন্তু একজন খারাপ উদ্যোক্তা যাতে ব্যাংক থেকে কোনো অবস্থাতেই ঋণ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করাই বেশি জরুরি।

অন্যদিকে আগে খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৩ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতপশিল করতে পারত। বর্তমানে সেটা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পুনঃতপশিলের পাশাপাশি ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতার অজুহাতে ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব খেলাপি ঋণ হিসাব সহজ শর্তে পুনর্গঠন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই সুবিধা পেয়েছে মূলত শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি গোষ্ঠী। ওই সময় মোট ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছিল। এ ছাড়া অতি সম্প্রতি ১০টি দুর্বল ব্যাংককে অন্যান্য সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘কোনো একটি ব্যাংক কী কারণে দুর্বল হলো, তার দায়-দেনার অবস্থা কী, তা নির্ধারণ না করেই অনেকটা জোর করে অন্য একটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা চলছে। এতে কোনো লাভ হবে না। আবার যেসব পরিচালকের কারণে ব্যাংকটি দুর্দশাগ্রস্ত, তাদের শাস্তির আওতায় না এনে ৫ বছর পর তাদের আবার পদে ফেরার সুযোগ রাখা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের পদক্ষেপ ঘটনা কোথাও দেখা যায়নি।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণে ব্যাংক মালিকরা ভূমিকা রাখছেন। তাদের আবদারে ২০১৫ সালে ১১টি শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক পদে থাকার বিধান রেখে ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন করা হয়েছিল। ওই বছরের ১ এপ্রিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বেসরকারি ব্যাংকের বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) কমিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছরের ২০ জুন ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির কার্যালয়ে বসে আমানত ও ঋণের সুদ হার যথাক্রমে ছয় ও নয় শতাংশ করা হয়েছিল।

নবীন নিউজ/জেড

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে টিউলিপের উকিল নোটিশ

news image

এনবিআরে কাফনের কাপড় পরে কলম বিরতি শুরু

news image

সাবেক সিইসিকে লাঞ্ছিত ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি

news image

জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজধানীর অনেক এলাকা

news image

পৃথক সচিবালয় হলে হস্তক্ষেপ মুক্ত হবে বিচার বিভাগ: প্রধান উপদেষ্টা

news image

পাশ হওয়া বাজেটে বিশেষ সুবিধা বাড়লো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

news image

দেশে এক দিনে করোনায় পাঁচ মৃত্যু, শনাক্ত ৩৬ জন

news image

'জুতার মালা' দিয়ে সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে পুলিশে সোপর্দ

news image

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর তিন সন্তানের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

news image

ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

২৪ ঘণ্টায় করোনায় দুই জনের মৃত্যু

news image

২৬ জুন শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা

news image

সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি

news image

৫ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর

news image

বিটিভি বেতারের স্বায়ত্তশাসনে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন

news image

৫ আগস্ট সরকারি ছুটি পালন করা হবে

news image

মহাখালী থেকে সরানো হচ্ছে বেনসন-গোল্ড লিফের কারখানা

news image

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

news image

এইচএসসি পরীক্ষা: কেন্দ্রে মানতে হবে ৭ নির্দেশনা

news image

নির্বাচনী আচরণবিধি ও সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমিশন সভা আজ

news image

বেরোবি'র সাবেক ২ উপাচার্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

news image

সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলন থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

news image

জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে অধ্যাদেশ জারি, সুবিধা নিলে ২ বছরের দণ্ড

news image

আরও ১৫৮ বাংলাদেশী লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন

news image

ঢাকাসহ ১৮ অঞ্চলে রাতের মধ্যে ঝড় হতে পারে

news image

ভিসা কার্যক্রম পুনঃরায় চালু: অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানালেন ড. ইউনূস

news image

‘তেহরানে দূতাবাসের ৪০ বাংলাদেশীকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে’

news image

যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছি, তাই জ্বালানির দাম এখনই বাড়াচ্ছি না: অর্থ উপদেষ্টা

news image

বিলম্ব ফি দিয়ে এইচএসসির ফরম পূরণ করা যাবে ২ দিন

news image

৫ দেশে নতুন মিশন খুলবে বাংলাদেশ